নগরের অভিজাত এলাকা ছাড়ছেন ভাড়াটিয়ারা

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২২, ৩:৫৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে
  • Print

সিলেট নগরীর অভিজাত এলাকা শাহজালাল উপশহর। ১৯৮২ সালে আবাসন সমস্যা নিরসনে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ১৮৮ একর জমির ওপর উপশহরটি গড়ে তোলে। এরপর থেকে ১০টি ব্লকে দুই হাজারের কাছাকাছি প্লটের ভবনগুলোতে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করে আসছে। এবার ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের অন্যান্য অঞ্চলের মতো উপশহরও মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। উপশহরের ৯৭টি সড়ক ডুবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়। দীর্ঘদিন বাসায় পানি জমে দুর্ভোগ পোহান বাসিন্দারা।

সিলেট নগরে প্রথম দফা বন্যার কবলে পড়ে গত ১৪ মে। সে সময় প্রায় এক সপ্তাহ পানিবন্দি ছিলেন উপশহরের কয়েক হাজার বাসিন্দা। গত ১৬ জুন ফের প্লাবিত হয় নগরের বিভিন্ন এলাকা।

বন্যার পানি নামতেই ভাড়াটিয়ারা বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন। কারণ হিসেবে ভবিষ্যতের ভোগান্তি এড়ানোর কথা বলছেন তারা।

এক যুগের বেশি ডি ব্লকের ২৮ নম্বর সড়কের তিনতলা বাড়িতে ভাড়া থাকেন ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম। একাধিক বন্যা দেখলেও এবারের স্মৃতি একেবারেই ভিন্ন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন বাসার ভেতর কোমর সমান পানি ছিল। এমন দুর্ভোগ জীবনে দেখেননি। আগামীতেও এমন বন্যার কবলে পড়তে হতে পারে- এই সম্ভাবনা থেকে জুলাই মাসে বাসা ছেড়ে দিয়েছেন।
উপশহরের অনেক ভাড়াটিয়া নিরাপদ এলাকায় চলে যাচ্ছেন। পানি কমার পর এ পর্যন্ত শতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়েছে। অবশ্য তাদের বেশিরভাগই নিচতলার বাসিন্দা। বাকিরাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শনিবার ডি ও ই ব্লকের অধিকাংশ বাসার নিচতলা খালি দেখা যায়। বিভিন্ন ভবনের সামনে টু-লেট ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

শাহজালাল উপশহর এলাকার সাবেক বাসিন্দা আহমদ মাহবুব ফেরদৌস জানান, ১৫ বছর এলাকাটিতে বসবাস করেছেন তিনি। এবারের বন্যার পর আখালিয়া এলাকায় বাসা স্থানান্তর করেছেন। প্রথম দফা বন্যায় বাসার আসবাবপত্রের কিছু ক্ষতি হয়েছিল। পরেরবার ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। মালামাল অন্যান্য স্থানে সরানোর সুযোগও পাওয়া যায়নি। এতে করে সব নষ্ট হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু শাহজালাল উপশহর নয়, বন্যায় সিলেট নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ৩০টি এলাকা থেকে ভাড়াটিয়া চলে যাচ্ছেন। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে- উপশহরের পাশের তেররতন, যতরপুর, সোবহানীঘাট, কুশিঘাট, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, জামতলা, শেখঘাট, মোল্লাপাড়া, ঘাসিটুলা, খুলিয়াপাড়া, মোগলটুলা, তালতলা, মজুমদারপাড়া, কানিশাইল ইত্যাদি। নগরীর শেখঘাট কুয়ারপাড়ার বাসিন্দা চাকরিজীবী রাজীব ঘোষ বলেন, এখন প্রতিবছরই এ রকম বন্যা হবে। দুর্ভোগের ঝুঁকি এড়াতে বাসা পরিবর্তন করেছি।

তুলনামূলক নিচু এলাকা হওয়ায় বন্যায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দারা। সি ব্লক ছেড়ে আসা সরকারি চাকরিজীবী মাহবুর রহমান বলেন, উপশহর নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। ভরসা পাচ্ছি না বলে আগপাড়া এলাকায় নতুন বাসা ভাড়া করেছি।

স্থানীয় কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ সেলিম বলেন, বন্যা এবার সবাইকে ডুবিয়েছে। টাকা দিয়ে কেউ-ই দুর্ভোগ কিনতে চান না। এ জন্য পানি নামার পর অনেকেই উপশহরের বাসা পরিবর্তন করছেন। সম্প্রতি ড্রেন পরিস্কার করতে গিয়ে লেপ-তোশকও পেয়েছি। আসলে উপশহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সুরমা নদী খনন ছাড়া পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হবে না।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এ সমস্যা শুধু উপশহরের নয়, সুরমার তীরবর্তী সবক’টি এলাকার পরিস্থিতি এবার বেশ খারাপ ছিল। অনেকে বাসাবাড়ি পরিবর্তন করছেন। বর্তমানে নদী খনন নিয়ে কথা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সিলেট সফর করে এর গুরুত্ব বুঝেছেন। আশা করি, সরকার নদী খননের ওপর গুরুত্ব দেবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও নিউজ