
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দীর্ঘদিন সুস্থ ও কর্মক্ষম শরীর পেতে চান? যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জন্য দরকার ধৈর্য, আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং কিছু নিয়মিত ভালো অভ্যাস। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তারা জানিয়েছেন, পাঁচটি জীবনধারা বা অভ্যাস দীর্ঘায়ু ও মানসিক-শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
চলুন জেনে নিই সেই পাঁচটি অভ্যাস—
হার্ভার্ডের গবেষণা বলছে, ধ্যান ও মনঃসংযোগ মানসিক চাপ কমিয়ে মনোযোগ বাড়ায়। এতে মানুষ বর্তমানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।
অতীতের অনুশোচনা বা ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ থেকে জন্ম নেয়া চাপ কর্টিসলসহ শরীরের বেশ কিছু হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল করে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষকেরা পরামর্শ দিয়েছেন— ছোট ছোট অভ্যাস যেমন মনোযোগ দিয়ে হাঁটা, গাছ দেখা, বা ধীরে সুস্থে খাওয়া— এগুলো মানসিক প্রশান্তি আনে।
স্ট্রেস বেড়ে গেলে “বক্স ব্রিদিং” (নিয়মিত ছন্দে শ্বাস নেওয়া ও ছেড়ে দেওয়া) পদ্ধতি পাঁচ মিনিট চর্চা করলে শরীর ও মস্তিষ্ক শান্ত হয়।
ভালো ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করে এবং দীর্ঘায়ুতে সাহায্য করে।
হার্ভার্ড গবেষকদের মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ৭ ঘণ্টা মানসম্মত ঘুম সবচেয়ে উপযোগী।
অতিরিক্ত বা অনিয়মিত ঘুম যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ঘুমের মাঝে বারবার জেগে ওঠাও বিপজ্জনক। নিয়মিত ঘুম শরীরের কোষ পুনর্গঠন করে এবং হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখে।
হার্ভার্ডের বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাকৃতিক খাবারই দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার মূল।
ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও গোটা শস্যজাতীয় খাবারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।
কারণ এসব প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকে লবণ, চিনি ও রাসায়নিক উপাদান, যা শরীরের প্রদাহ বাড়িয়ে হজমশক্তি নষ্ট করে।
খাবারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে— মনের চাহিদার বদলে শরীরের পুষ্টির প্রয়োজন বুঝে খাওয়াই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, ব্যায়ামকে কঠিন দায়িত্ব নয়, বরং আনন্দের অংশ হিসেবে নিতে হবে।
অফিসের বিরতিতে হাঁটাহাঁটি, সিঁড়ি ব্যবহার, বাগান করা, নাচ বা খেলাধুলা— এসবই শরীরচর্চার কার্যকর উপায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকা রক্তনালি ও বিপাকীয় তন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তাই দীর্ঘ কাজের মাঝেও কিছুটা নড়াচড়া করা জরুরি।
হার্ভার্ড গবেষকরা বলছেন, দূষণ, মাইক্রোপ্লাস্টিক ও কেমিক্যালের প্রভাব কমাতে পারলে দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সুস্থ থাকে।
বায়ুদূষণের ক্ষতিকর কণা ফুসফুস ও রক্তে মিশে হৃৎপিণ্ডসহ নানা অঙ্গের ক্ষতি করে।
তাদের পরামর্শ— এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার, ফিল্টার করা পানি পান, প্লাস্টিকের পরিবর্তে কাচ বা স্টেইনলেস পাত্র ব্যবহার এবং রান্নাঘরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা।
এ ছাড়া ঘরে ও বাইরে গাছ লাগালে বাতাসের মান উন্নত হয় এবং দূষণের ক্ষতি অনেকটা কমানো যায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা বলছে, শরীর ও মনের ভারসাম্য, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক খাবার ও সচেতন জীবনধারা— এই চারটি বিষয়েই নিহিত রয়েছে দীর্ঘায়ু ও জীবনের স্থিতি।
এই পাঁচ অভ্যাসে পরিবর্তন না এলেও নিয়মিত চর্চায় ধীরে ধীরে শরীর ও মন হয়ে উঠবে আরও শক্তিশালী, স্থির ও প্রশান্ত।