
সিলেটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাদাঘাট হয়ে কুমারগাঁও পর্যন্ত মাত্র ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক—যার কাজ চলছে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে। সড়কটি চারলেন হলে সিলেট নগরের যানজট অনেকটা কমে যাবে এবং পর্যটন ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু একযুগেও প্রকল্পটির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।
সড়কটি সম্পূর্ণ হলে সিলেট শহর এড়িয়ে বিমানবন্দরগামী ও বিভাগের তিন জেলার যাত্রীরা সহজে চলাচল করতে পারবেন। পাথরবাহী ট্রাকও শহরের ভেতর না ঢুকে এই বাইপাস ব্যবহার করে সরাসরি মহাসড়কে যেতে পারবে। এতে যানজট ও দুর্ঘটনা উভয়ই কমবে।
২০১২ সালে সিলেট বিমানবন্দর–বাদাঘাট–কুমারগাঁও বাইপাস দুই লেন সড়কের কাজ শুরু হয়। পরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবিতে এটি চারলেন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ ও মামলা–মোকদ্দমায় জড়িয়ে কাজ থমকে যায়।
সওজ (সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর) জানায়, এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
কুমারগাঁও থেকে বাদাঘাট কারাগার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন।
বাদাঘাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ কিলোমিটার কাজ শেষ হলেও কিছু জমির মালিক এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি।
ধুপনিগুল মৌজার ৩ কিলোমিটার অংশে ৪০ ফুট প্রশস্ত সরকারি জায়গা নিয়ে ৪টি মামলা চলমান, ফলে ওই অংশের কাজ প্রায় বন্ধ।
ধুপনিগুল এলাকার বাসিন্দারা দাবি করছেন, সওজের জায়গার কিছু অংশ তাদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। বিষয়টি আদালতে গড়ানোর পর প্রকল্পের এলাইনমেন্ট ও নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়, যা কাজকে আরও বিলম্বিত করেছে।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ বলেন,
“ভোলাগঞ্জ দিয়ে আমদানিকৃত পাথর ও চুনাপাথর স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। বাইপাস সড়কটি চালু হলে পাথরবোঝাই ট্রাক শহরের ভেতর প্রবেশ না করে সহজেই চলাচল করতে পারবে। এতে যানজট ও পর্যটকদের দুর্ভোগ কমবে, যা সিলেটের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।”
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমির হোসেন জানিয়েছেন,
“জমি অধিগ্রহণের জন্য ৭৭ কোটি টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির মালিকরা তাদের টাকা পেয়ে যাবেন। মামলা নিষ্পত্তির পর বাকিটা দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।”
এই ১১ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক চালু হলে—
সিলেট শহরে ট্রাক চলাচল বন্ধ হবে
বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের সময় বাঁচবে
ভোলাগঞ্জ, উৎমাছড়া, বিছনাকান্দি, রাতারগুলের পর্যটকদের যাতায়াত সহজ হবে
শহরের যানজট অনেকটা কমে যাবে
কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে—আর কত বছর অপেক্ষা করতে হবে ১১ কিলোমিটারের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির জন্য?