আজ শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

নাম পার্সেল, ভেতরে অবৈধ পণ্য : সিলেটে কুরিয়ার সার্ভিসে যা হচ্ছে

  • আপডেট টাইম : অক্টোবর ২৪, ২০২৫ ১:২৪ পূর্বাহ্ণ

সীমান্তবর্তী সিলেট সবসময়ই চোরাচালানের ঝুঁকিতে ছিল। এখন সেই ঝুঁকি আরও বেড়েছে কুরিয়ার সার্ভিসকে কেন্দ্র করে। সাধারণ পার্সেলের মোড়কে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক ও অবৈধ পণ্যের চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযানে উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য।

অভিযোগ উঠেছে, এসব কর্মকাণ্ড কুরিয়ার সার্ভিসের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে হচ্ছে। আবার অনেক সময় চোরাকারবারিরা নির্দোষ পার্সেলের আড়ালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো এখন পাচারকারীদের জন্য হয়ে উঠেছে একপ্রকার “নিরাপদ রুট”। নিয়মিত অভিযান চললেও পাচারের কৌশল এতটাই উন্নত হয়েছে যে, তা শনাক্ত করা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।

গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাত ২টার দিকে কানাইঘাট থানার পুলিশ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান থেকে ৮০ বস্তা ভারতীয় চা-পাতা (প্রায় ৪ হাজার কেজি) জব্দ করে। এ ঘটনায় কাভার্ডভ্যানচালক মাসুম মিয়া (২৬) কে আটক করা হয়, যিনি বিশ্বনাথ উপজেলার হাওরাবাজার এলাকার মৃত নাইম উদ্দিনের ছেলে। উদ্ধারকৃত চা-পাতার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১২ লাখ টাকা।

এর আগে, ৩০ জুলাই সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের সামনে অভিযান চালিয়ে তিন মাদক চোরাকারবারিকে আটক করে র‌্যাব-৯। তারা বাচ্চাদের পায়জামা ও আন্ডারওয়্যারের ভেতরে ২০০ বোতল ফেনসিডিল লুকিয়ে পাঠানোর চেষ্টা করছিল।

এছাড়া ১৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে গাঁজা পাঠাতে গিয়ে এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়।
আর ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরের নাইওরপুল এলাকার এসএ পরিবহণ অফিসে সেনাবাহিনী ও বিজিবির যৌথ টাস্কফোর্স অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় শাড়ি, কম্বল, স্কিন ব্রাইট ক্রিম ও নিভিয়া বডি লোশন জব্দ করে। অভিযানের পর থেকে অফিসটি বন্ধ রয়েছে, স্টাফরাও পলাতক।

সূত্র জানায়, চোরাকারবারিরা এখন নানাভাবে কৌশল বদলাচ্ছে। কখনও টেলিভিশন, ল্যাপটপ বা পোশাকের ভেতরে লুকিয়ে ফেনসিডিল, ইয়াবা কিংবা গাঁজা পাঠানো হচ্ছে। পার্সেল প্রেরকদের দেওয়া নাম-ঠিকানা বেশিরভাগ সময়ই ভুয়া থাকে, এমনকি দেওয়া ফোন নম্বর থেকেও তাদের শনাক্ত করা যায় না। ফলে প্রাপক ধরা পড়লেও প্রেরক প্রায়ই থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।

র‌্যাব-৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) কে. এম. শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো আন্তরিক হলে এই রুটে মাদক পাচার অনেকটাই বন্ধ করা সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, “কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো উচিত, যাতে কেউ এই সুযোগ নিতে না পারে।”

বিশ্লেষকদের মতে, কুরিয়ার সার্ভিসের দুর্বল তদারকির কারণেই পাচারকারীরা সহজে এই রুট ব্যবহার করছে। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে পার্সেল স্ক্যানিং বা শনাক্তকরণের আধুনিক ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া প্রেরক-প্রাপক যাচাইয়ের বাধ্যতামূলক কোনো প্রক্রিয়া না থাকায় পাচারকারীদের জন্য এই পথ এখন “ঝুঁকিমুক্ত”।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরামর্শ দিয়েছে— প্রতিটি কুরিয়ার পার্সেলের প্রেরক ও প্রাপকের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই বাধ্যতামূলক করা, সন্দেহভাজন পার্সেলে এক্স-রে বা স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা, এবং প্রতিটি পার্সেলকে ট্র্যাকিংয়ের আওতায় আনা।

এছাড়া কুরিয়ার কোম্পানির এজেন্ট ও কর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় প্রশাসন, র‌্যাব, বিজিবি ও কাস্টমসের সমন্বিত নজরদারি টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

এই সম্পর্কিত আরও নিউজ...