প্রভাবশালী মহলের হামলা-মামলা ষড়যন্ত্রের শিকার কাদিপুর গ্রামবাসী

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: ৭ মে ২০২২, ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে
  • Print

 

ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামের নিরীহ লোকজনের উপর হামলা-মামলা ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। সংঘবদ্ধ এই চক্রের হাত থেকে রক্ষা ও দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (৫ মে) সিলেট প্রেসক্লাবে গ্রামবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কাদিপুর গ্রামের দরছ আলী, লুৎফুর রহমান, অলিউর রহমান, হাবিবুর রহমান, মিজানুর রহমান ও কবির মিয়াসহ তাদের সহযোগীরা। তারা এলাকায় মামলাবাজ হিসেবে পরিচিত। সদ্য সাবেক ইউপি সদস্য নেপুর আলী ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাজ্জাদুর রহমান, জাবেদ আহমদ, আনোয়ার হোসেন, রুহেল মিয়া ও কামাল আহমদসহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট ঘটনা উল্লেখ করে একাধিক মামলা দায়ের করে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে মানহানিকর ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছে।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘২০১৭ সালে গ্রামের একটি সরকারি রাস্তা নিজেদের নামে নামকরণের চেষ্টা চালায়। তৎকালীন ইউপি সদস্য নেপুর আলীসহ গ্রামের লোকজন সেটি প্রতিহত করেন। গ্রামবাসী প্রশাসনের সহযোগিতায় সাইনবোর্ডটি অপসারণ করেন। প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে দরছ আলী ও লুৎফুর রহমানের লোকজন নেপুর আলী, সাজ্জাদুর রহমান, জাবেদ আহমদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।’

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, ‘দরছ আলী ও লুৎফুর রহমান একের পর এক মামলা দিয়ে গ্রামের নিরীহ লোকজনকে হয়রানী চালাচ্ছেন। কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে তাদের সহযোগী আনোয়ার আলীকে বাদী করে সাবেক ইউপি সদস্য নেপুর আলীসহ গ্রামের নিরীহ ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে গত ১৬ এপ্রিল ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রভাবশালী চক্রের সহযোগী কবির মিয়া, দুধাই মিয়া, রিপন মিয়া, দিলোয়ার হোসেন ও ধন মিয়ার পুত্র মিজানুর রহমান সংঘবদ্ধভাবে নির্যাতিতার স্বামীর সহযোগিতায় এক মহিলাকে ভাড়াটিয়া বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণসহ নানাভাবে নির্যাতন অব্যাহত রাখেন। ওই নারী তাদের কবল থেকে পালিয়ে গিয়ে তৎকালীন ইউপি সদস্য নেপুর আলীকে জানান। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিষয় জেনে নেপুর আলী নির্যাতিতাকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে যাওয়ার পরামর্শ দেন।’

আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পরে, ওসমানী মেডিকেলের ওসিসি বিভাগের মাধ্যমে গত ১০ ফেব্রæয়ারি বালাগঞ্জের বাবরকপুর গ্রামের এক নির্যাতিতা গৃহবধু তার স্বামী সহযোগী চুনু মিয়াসহ কাদিপুর গ্রামের দুধাই মিয়া, রিপন মিয়া, কবির মিয়া, দিলোয়ার হোসেন ও মিজানুর রহমানকে আসামি করে ওসমানীনগর থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেন। অভিযুক্তদের ব্যাপারে সত্যতা পেয়ে পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে। মামলাটি তদন্ত অবস্থায় লুৎফুর রহমান, অলিউর রহমান বাদি ও তার মাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং টাকার মাধ্যমে ম্যানেজ করে মামলার এজহারকৃত মিজানুর রহমানসহ ৫ জনকে চেনেন না বলে আদালতে অ্যাভিডেভিট প্রদান করিয়ে নেন।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে গত ২৬ এপ্রিল দরছ আলী, লুৎফুর রহমান, অলিউর রহমানসহ সংঘবদ্ধ মহলের সদস্যরা গ্রামের ধন মিয়ার বাড়িতে লোকজন জমায়েত করে সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশে নির্যাতিতা ও তার মাকে উপস্থিত করে সামাজিক মাধ্যমে লাইভে গ্রামের নেপুর আলী ও সাজ্জাদ আলীর নামে অপ্রচার চালায়। দরছ আলী ও লুৎফুর রহমান কর্তৃক নির্যাতিতাকে ব্যবহার করে সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে বক্তব্য প্রকাশ করার পর তদন্তকাজের অংশ হিসেবে থানা পুলিশ লুৎফুর রহমান ও দরছ আলীর বাড়িতে গিয়ে বাদির সন্ধান চাইলে পুলিশের কাছে বাদির সন্ধান দিতে অপারগতা প্রকাশ করে যাচ্ছেন।’

লিখিত বক্তব্যে দাবি করা হয়, এর আগে ২০১৭ সালের দরছ আলীসহ তার সহযোগী মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গ্রামের মতছির আলীকে মারপিট করা হয়। দরছ আলীসহ সহযোগীদের আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২০৫/১৭) মতছিরের স্ত্রী সালমা বেগম। এরপর থেকে দরছ আলী ও মিজানুর রহমানসহ তার সহযোগীরা সালমা বেগমসহ তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে হুমকিধামকি অব্যাহত রেখেছেন।

গ্রামবাসীর পক্ষে আরও দাবি করা হয়, ২০১৯ সালের মিজানুর রহমান জনৈক নাসির উদ্দিনকে ইজারাদার দেখিয়ে গ্রামের জাবেদ আহমদকে আসামি করে গ্রামের বাসিন্দাদের নামীয় একটি দিঘীতে বিষ প্রয়োগে মাছ মেরে ফেলার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলা থেকে জাবেদকে অব্যাহতি দিয়েছেন। চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে প্রকাশ্য কাদিপুর গ্রামের সরকারী রাস্তা থেকে কয়েকটি বড় গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। অভিযোগটি প্রশাসনের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। গ্রামবাসী সম্মিলিতভাবে গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কিন্তু মিজানুর রহমান গাছ কাটার বিষয়টি প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে ধামাচাপা দিয়ে ফেলেছে। উল্টো তারা গাছকাটার প্রতিবাদকারীদের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আসামি করেছে।

আনোয়ার হোসেন আরও দাবি করেন, ‘চলতি বছরের ১৫ মার্চ বিশ্বনাথে ঘটনাস্থল উল্লেখ করে মারামারি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে গত ২২ মার্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন বিশ্বনাথ পুরান বাজার এলাকার এক নারী। মামলায় পরিকল্পিতভাবে কাদিপুর গ্রামের প্রবাসী সাজ্জাদুর রহমান, আনোয়ার হোসেন, জাবেদ আহমদ, কামাল হোসেন ও রুহেল আহমদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ ওই নারীর সঙ্গে অভিযুক্তদের কোনোদিনও দেখা হয়নি। ওই নারীকে তারা কোনোদিন দেখেননি। গ্রামবাসী বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কাদিপুর গ্রামের প্রভাবশালীচক্রটি অর্থের বিনিময়ে জনৈক নারীকে ম্যানেজ করে এই মামলা করিয়েছে। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনে অভিযুক্তরা ভালো মানুষ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। দরছ আলী টাকার বিনিময়ে একাধিক নিরীহ নারীকে ভিকটিম বানিয়ে কাদিপুর গ্রামের স্থানীয় সাবেক জনপ্রতিনিধিসহ নিরিহ লোকদের মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছেন।’

গত ২৭ মার্চ বালাগঞ্জ উপজেলার বরাকপুর গ্রামের জনৈক নারী আদালতে মানবপাচার আইনের মামলা দায়ের করেন। এতে পরিকল্পিতভাবে গ্রামের সদ্য সাবেক মেম্বার নেপুর আলী ও সমাজকর্মী জাবেদ আহমদকে আসামি করা হয়েছে। গ্রামের শান্তপ্রিয় মানুষদের নাজেহাল করার উদ্দেশ্যে কুচক্রি দরছ আলী ও লুৎফুর রহমান টাকার বিনিময়ে মহিলার মাধ্যমে তাদেরকে মামলায় আসামি করিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনেও এটি সাজানো প্রমাণিত হয়েছে।
এ অবস্থায় যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে প্রভাবশালী চক্রটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এদের হাত থেকে কাদিপুর গ্রামবাসীকে রক্ষার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সাবেক ইউপি সদস্য নেপুর আলী, প্রবাসী সাজ্জাদুর রহমান, সমাজসেবী সাইস্তা মিয়া ও জাবেদ আহমদ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও নিউজ