কোরবানির ঈদের আর ৭ দিন বাকি। জেলার বেশিরভাগ হাটগুলো তলিয়ে যাওয়ায় পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।
দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালবাজার এলাকার খামারি আব্দুস সাত্তার প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে খামার গড়ে তুলেছেন। সেখানে এখন বিক্রির জন্য উপযুক্ত গরু আছে ৪০টি। এই ঈদে সেগুলো বিক্রি করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু এখনও হাট না বসায় তিনি লোকসানের শঙ্কায় আছেন।
সাত্তার বলেন, ‘হাটের জায়গাগুলো এখনও পানির নিচে। পানি কোনদিন কমবে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। হাট বসবে কি না এ নিয়েও শঙ্কায় আছি।’
শেষদিকে হাট বসলেও আশানুরূপ ব্যবসা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বন্যায় সব মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত। এখন জীবন বাঁচানোই দায় হয়ে উঠেছে অনেকের। কোরবানি দেয়ার মতো পয়সা বেশিরভাগের হাতেই নেই। এ কারণে এবার পশু বিক্রি কমে যাবে। আবার বিক্রি হলেও আশানুরূপ দাম পাওয়া যাবে না।’
তিনি জানান, পানি উঠে গেছে বলে খামারেও এখন গরু রাখা যাচ্ছে না। আছে গো-খাদ্যের সংকট।
হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘গরুগুলো না পারছি রাখতে, না পারছি বিক্রি করতে।’
নগররের কাজিরবাজার পশুর হাটও তলিয়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ৮ থেকে ৯ দিন ধরে তলিয়ে ছিল এই হাট। দুদিন আগে পানি নেমেছিল। তবে বুধবার থেকে আবার পানি উঠেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫ দিন ধরে এই হাটের সব কাজ বন্ধ।
কাজিরবাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেন লোলন জানান, সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার খামারি ও ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে পশু নিয়ে আসেন। এবার বন্যার বেশিরভাগ সড়ক তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে কেউ পশু নিয়েও আসতে পারছেন না।
সিলেটে বন্যায় তলিয়ে হাট, পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কা
তিনি বুধবার বলেন, ‘আমাদের হাটে বন্যার পানি থাকায় কোরবানির হাটের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আগামী শুক্রবার থেকে কোরবানির জন্য হাটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, কিন্তু আজকে আবার হাট পানিতে তলিয়ে গেছে।
‘বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাটে স্থানীয় খামারি ও ব্যবসায়ীরা পশু নিয়ে আসেন। কিন্তু এবারের বন্যায় স্থানীয়রা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারও পালিত পশু মারাও গেছে। সড়ক ভেঙে যাওয়ার কারণে অনেকে পশুর গাড়ি নিয়ে নাও আসতে পারেন। তাই কোরবানির হাটে পশু ওঠা ও দামের ক্ষেত্রে এবার প্রভাব পড়বে।’
সিলেটে বসবে ৪১টি পশুর হাট
সিলেট জেলা ও মহানগরে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৪১টি কোরবানির পশুর হাট বসার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসকের হলরুমে বুধবার বিকেলে ঈদ উদযাপন ও অস্থায়ী পশুর হাট স্থাপন উপলক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।
তিনি জানান, সিলেট নগরে ৬টি এবং জেলায় ৩৫টি হাট প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে কোথাও হাট বসার অনুমতি নেই। কোথাও অবৈধভাবে হাট বসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘নগরের ৮টি স্থান পশুর হাট বসাতে জেলা প্রশাসক বরাবর প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে ৬টি হাটের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে বন্যার কারণে এবার হাট বসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে।’