সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গ যেনো অনিয়মের স্বর্গ রাজ্য। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নিয়ে গেলে লাশ কাটতে হলে শর্ত জুড়ে দেন সংশ্লিষ্টরা। টাকা ছাড়া কাটা হয় না কোনো লাশ। লাশ প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয় মৃতের স্বজনদের। এছাড়াও মেডিসিন, জীবাণুনাশক ও বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যয় হিসেবে নেয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় লাশের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের রেওয়াজ হরহামেশাই চলতে থাকলেও দেখার কেউ নেই।
জানায়, সুনামগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরের দুর্ঘটনা, সংঘর্ষ কিংবা খুন এবং অপমৃত্যুর কারণ সনাক্ত করতে লাশ মর্গে পাঠায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। জেলার একমাত্র মর্গ ২৫০ শয্যা সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল। যেখানে প্রতিদিনই একাধিক মৃতব্যক্তির ময়নাতদন্ত করা হয়। হাসপাতালে মর্গের দায়িত্বে অর্থাৎ লাশ কাটার দায়িত্বে রয়েছেন মনশুর নামের এক ব্যক্তি। মনশুরই লাশ কাঁটার অনিয়মের স্বর্গ রাজ্যের রাজা। তৃতীয় শ্রেণীর এই কর্মচারী শহরের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের মালিক বনেছেন মৃত ব্যক্তিদের স্বজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে।
মনশুরের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা যায়। লাশের কাছ থেকে পাওয়া টাকার ভাগ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও পেয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
৩ জুন জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামে পারিবারিক বিরোধের জেরে নাজিমুল নামে এক যুবক খুন হন। নাজিমুলের মৃত্যুর কারন জানতে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায় দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ।
নিহত নাজিমুলের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, নাজিমুলের লাশ হাসপাতালে সন্ধ্যা ৭ টায় পৌঁছলে রাতে লাশ কাটা হয় না বলে জানায় মর্গে থাকা ডুম মনশুর। রাতে লাশ মর্গে রাখতে হবে। এর জন্য দুই হাজার টাকা দাবি করে সে। ১ হাজার টাকা দেয়ার পর হাসপাতালে মর্গে লাশ রেখে দরজায় তালা ঝুলিয়ে সকাল ৯ টায় আসতে নাজিমুলের স্বজনদের জানায় মনশুর।
লাশের সাথে থাকা পুলিশ কনস্টেবল মো. নূর মোহাম্মদ লাশের যাবতীয় নথিপত্র কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করেন। পরদিন সোমবার দুপুর ১ টায় হাসপাতালের ডাক্তারদের একটি দল ও ডুম মনসুর মিলে লাশের ময়নাতদন্ত করেন। ডাক্তাররা চলে গেলে মনশুর লাশের স্বজনদের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। নতুবা লাশ কাটা রয়েছে সেলাই ছাড়া নিয়ে যেতে। এসময় এতো টাকা দিতে অসমর্থ জানালে রোগীর স্বজনদের সাথে দূর ব্যবহার করেন মনুশুর। পরে দুই হাজার টাকা দিয়ে অনেক কাকুতি মিনতি পর রাজি হলে লাশ সেলাই করে দেয় সে।
মৃত নাজিমুলের লাশের সাথে থাকা ইউপি সদস্য জুবায়ের আহমদ বলেন, মৃত ব্যক্তি আমার নিকট আত্মীয়। গত রাত থেকে হাসপাতালে আছি। টাকা ছাড়া কিছু হয় না। মর্গে লাশ রাখার জন্য রাতে ১ হাজার টাকা দিছি। লাশ কাটার পর ৫ হাজার টাকা দাবি করে বসে। না হলে লাশ সেলাই করতে চায় না ডুম। গরীব মানুষ এরা এতো টাকা পাবে কই। অনেক কাকুতি মিনতি করে দুই হাজার টাকায় লাশ সেলাই করতে রাজি হয়। এ কেমন সিস্টেম লাশের আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন কর্তৃপক্ষ।
তবে মর্গে লাশ কাটতে কোনো টাকা নেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন সদর হাসপাতালে আবাসিক অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম। টাকা আদায়ের কোনো অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।