স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার জন্য পথে কষ্ট সহ্য করে যখন বাড়ি ফিরছেন মানুষ তখন নীলফামারীর সৈয়দপুরের কসাইরা স্বজনদের ফেলে ছুটছেন ঢাকায়। বাস ও ট্রেনের পাশাপাশি বিমানে করে ঢাকায় যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কসাই।
তারা বলেন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু জবাই ও কাটাকাটি নিয়ে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে। এ সময় সেখানে তাদের কদর বেশি। তাই তারা সেখানে ছুটছেন। ঈদের তিন থেকে চার দিন তারা ঢাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন এলাকায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ করবেন।
জানা যায়, সৈয়দপুর থেকে বাংলাদেশ বিমানে ঢাকায় যেতে ২৭০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। নভোএয়ার ও ইউএস বাংলায় ৩০০০ টাকা ভাড়া। বেশিরভাগ কসাই বাংলাদেশ বিমানে করে ঢাকায় যাচ্ছেন।
সৈয়দপুরের বিমানের টিকিট বিক্রেতা পাখি ট্যুর এন্ড ট্রাভেলসের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন কসাই আমার কাছে বিমানের টিকিট নিয়েছেন। উপজেলায় বিমানের আরো যারা টিকিট বিক্রি করেন তাদের মাধ্যমেও কসাইরা ঢাকায় যাচ্ছেন। যারা যাচ্ছেন তারা ফিরতি টিকিটের জন্যও বলে রেখেছেন।
সৈয়দপুরের কসাইদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইতোমধ্যে অনেকেই ঢাকায় পৌঁছেও গেছেন। ঢাকায় যাওয়ার আগেই তারা চুক্তি করে যান পশু জবাই ও মাংস কাটার দরদাম। যারা পশু কোরবনি দেবেন তাদের সঙ্গে আগেই চুক্তিবদ্ধ হন তারা।
তারা আরো জানান, এখানকার কসাইদের সুবিধা হচ্ছে ঈদের আগে ঢাকা যাওয়ার টিকেটের কোনও চাপ থাকে না। প্রয়োজনের তাগিদে অনেকে বিমানে, ট্রেনে ও বাসে করে ঢাকায় যাচ্ছেন। আবার ঈদের পরে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে আসার টিকিটও সহজে পাওয়া যায়, থাকে না ভিড়। ফলে তাদের বাড়তি আয় হয় ঝামেলা ছাড়াই। বিভিন্ন লোক মারফত কিংবা অনলাইন বা সামাজিকমাধ্যমের সাহায্যে ইতোমধ্যে কসাইদের সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছেন পশু ক্রেতারা। আর সেই হিসেবে কসাইরাও রওনা হয়েছেন রাজধানীর উদ্দেশ্যে।
কসাই গোলাম রব্বানী বলেন, প্রতি বছরই এই সময়ে আমাদের একটি বাড়তি উপার্জন আসে পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ থেকে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং অনেকেই রওনাও দিয়েছেন। বেশিরভাগই বিমানে করে যাচ্ছেন। আমি নিজেও শনিবার রাতে বিমানে ঢাকায় পৌঁছে গেছি।
সৈয়দপুর রেলওয়ে গেটবাজার এলাকার কসাই মোবারক হোসেন বলেন, চারজনের একটি করে গ্রুপ আমরা ঢাকায় যাই। একদিনে একেকটি গ্রুপ পাঁচ থেকে ছয়টি পর্যন্ত পশু জবাই ও মাংস কাটতে পারে। পশু জবাই ও মাংস কাটার জন্য রেট ধরা হয়েছে পশুর দামের প্রতি হাজারে ২৫০ টাকা। অর্থাৎ ১০ হাজার টাকা দামের পশু হলে কসাইদের জবাই ও মাংস কাটার জন্য দিতে হবে আড়াই হাজার টাকা। আর লাখ টাকার পশুর জন্য কসাইকে দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা। পশুর দামের ওপর নির্ধারণ করেই বাড়বে কসাইদের রেট। সে হিসেবে একদিনেই পাওয়া যাবে এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার ওপরে। আগামী তিন দিনে আয় হবে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা। যা খরচ ও যাবতীয় বিষয় বাদ দিলেও ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত উপার্জন হবে।
সৈয়দপুর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ নাদিম বলেন, সৈয়দপুর থেকে প্রায় ২০০ কসাই ঢাকা যায় প্রতি বছর। এবার আরো বেশি যাচ্ছে। এখান থেকে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সহজ। ঈদের আগে কিংবা ঈদের দিনও ঢাকা যেতে সমস্যা হয় না। আর ঈদের পরে ফিরে আসাতেও সমস্যা হয় না। এই তিন দিনে ঢাকা একেবারে ফাঁকা থাকে। কসাইরা সহজে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কাজ করতে পারে। বাড়তি ঝুট ঝামেলা ছাড়াই আসে বাড়তি উপার্জন।