করোনা মহমারির অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলমান বৈশ্বিক মন্দাভাব কাটিয়ে অর্থনীতিকে সচল রাখতে ব্যয় সংকোচন নীতি বেছে নিয়েছে সরকার।
সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ব্যবহার ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার পাশাপাশি জ্বালানি খাতে বাজেটে বরাদ্দের ২০ শতাংশ কম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকগুলো সশরীরে না করে অনলাইনে করার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
আবার জানানো হয়েছে, জরুরি না হলে বন্ধ থাকবে বিদেশ সফর।
বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সরকারের ব্যয়-সাশ্রয়ে কার্যকর কর্মপন্থা নিরূপণে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারও বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। সূচি করে সারা দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং চালু হয়েছে। রাত ৮টায় দোকান বন্ধ, আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞা, সপ্তাহে এক দিনের জন্য পেট্রল পাম্প বন্ধের সিদ্ধান্ত এসেছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ ঠেকাতে বিলাসদ্রব্য আমদানিতে নিরুৎসাহী করা, অতি প্রয়োজনীয় না হলে সরকারি চাকুরেদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞাসহ নানা সিদ্ধান্ত এসেছে। তবে এসব পদক্ষেপের পরও দুই বছর পর রিজার্ভ এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।
দেশে দেশে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে দেশবাসীর মাঝেও উৎকণ্ঠা স্পষ্ট। পুঁজিবাজারেও পড়েছে এর প্রভাব। ঢালাও দর হারাচ্ছে শেয়ার।
এই পরিস্থিতিতে সরকার ব্যয় সংকোচনের যে নীতি ঘোষণা করেছে, সেটিতে কী কী বিষয় থাকবে, তা নির্ধারণে বসে এই বৈঠক।
এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। উপস্থিত ছিলেন সব মন্ত্রণালয়, বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং সচিবরা।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বৈঠক থেকে নেয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে:
১. সরকারি সব দপ্তরে বিদ্যুতের ২৫ শতাংশ ব্যবহার কমাতে হবে। বাজেটে জ্বালানি খাত যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, ব্যয় তার চেয়ে ২০ শতাংশ কম করা হবে।
২. অনিবার্য না হলে শারীরিক উপস্থিতিতে সভা পরিহার করতে হবে। বেশির ভাগ সভা অনলাইনে করতে হবে।
৩. অত্যাবশ্যক না হলে বিদেশ ভ্রমণ যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে।
৪. খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুতদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্যান্য পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে।
৫. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে প্রাইভেট কারের ব্যবহার নিয়েও পর্যালোচনা হবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
৬. অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়াতে অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এনবিআরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিজস্ব ক্রয় পরিকল্পনা পুনঃপর্যালোচনা করে রাজস্ব ব্যয় হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সচিবরা আলোচনায় অংশ নেন।