নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, রাজনীতি করতে এসেছি। আমি আপনাদের গ্যারান্টি দিয়ে একটি কথা বলতে চাই। সামনের সময়টা ভালো না, শুধু আমাদের জন্য না বরং সারা বিশ্বের জন্যই ভালো না। আজকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কীভাবে মোকাবিলা করছেন? সেটা মনের জোড়ে করছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই মনের জোড় দিয়েছেন। আমরা যারা ভিতরে আছি আমরা বুঝতে পারছি।
গতকাল বুধবার (২৭ জুলাই) বিকেলে নগরীর কালির বাজারে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে জেলা কমিউনিটি পুলিশের পরিচিতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম ওসমান এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, একটু লোডশেডিং দেওয়া হয়েছে, আমরা সহ্য করতে পারছি না। আমার খুব লজ্জা হয়, আমার পরিচয় কী? আমার পরিচয় আমি একজন রাজনীতিবিদ। একজন আওয়ামী লীগের নেতা, একজন সংসদ সদস্য। আমার পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে যখন দেখি একজন রাজনীতিবিদ খিল খিলিয়ে হেসে বক্তব্য দেয়, বাংলাদেশ নাকি শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। আর যদিও বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হয় তবে আপনি রাজনীতিবিদ হিসেবে খুশি হবেন কেন? তাহলে আপনার দেশপ্রেম কোথায়? আপনার দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ কোথায়? এদেশ যদি শ্রীলঙ্কার মতো হয়, তবে তো আপনার কষ্ট পাওয়া উচিৎ, আপনি খুশি হচ্ছেন কেন? আপনি বিরোধী দল করেন, করবেন। কিন্তু যা করবেন তাতো দেশের জন্য করবেন।
তিনি বলেন, হজ পালনের সময় আমি যখন আরাফাতের ময়দানে গেলাম, সেখানে কিছু বাংলাদেশি ছেলেরা আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম কী করো এখানে? তারা বলল আজ ভালো কাজ করছি, আরাফাতের ময়দানের ময়লা পরিষ্কার করছি। আমি জানতে চাইলাম অন্য দিন কী কর? তারা বলতে চাইল না, একজন বললেন সুইপারের কাজ করে। সেখানে তাপমাত্রা পঞ্চাশের ওপরে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে না, মিডেল ইস্টে থাকা প্রবাসীরা শরীরকে পুড়িয়ে উপার্জন করে দেশে টাকা পাঠায়। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম তাদের কথা শুনে। তারা ভিডিওতে বলেছে মাত্র ৬৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তারা সৌদি আরবে এসেছে। অথচ প্রত্যেকের খরচ হয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করে। তাদের এখানে একটি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আমি সেখানে থাকা বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতকে টেলিফোন করে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, শুধু ওরা নয়, এমন পরিস্থিতির শিকার আরও অন্তত এক লাখ মানুষ। আমি বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। তবে তাদের (প্রবাসী) সেই দেশের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আমাদের পাঠিয়েছে কে, সেতো আমাদের দেশেরই একজন ভাই।
শামীম ওসমান প্রশ্ন রাখেন, ওরা কারা? এই টাকা দিয়ে কী কাজ হবে? এই টাকা নিয়ে কী করবেন? রোজ কেয়ামতের দিনে জবাব দেবেন না?
তিনি বলেন, যারা মাদক বেচে সমাজে, মাদক খেয়ে সমাজটাকে নষ্ট করে দিচ্ছেন, কার জন্য করছেন? আপনার ছেলে-মেয়ের জন্য অনেক টাকা-পয়সা রেখে যাবেন, জবাব দেবেন না? মানুষের জমি দখল করে সাইনবোর্ড লাগাচ্ছেন। কার জন্য করছেন, নিজের সন্তানদের জন্য ভবিষ্যৎ গড়ছেন? মরবেন না, মরতে তো হবে একদিন, এটাই ফাইনাল। তবে কেন গরিব মানুষের পেটে লাথি দিয়ে টাকা নিচ্ছেন? এদের একজনের অভিশাপ লেগে গেলে আপনি যতই নামাজ-রোজা আর পূজা-অর্চনা করেন না কেন কোনোটাই কাজে আসবে না। আর একটা মানুষের দোয়া যদি লেগে যায় অন্তর থেকে, আর কিছুই লাগে না। আমি এটাতেই বিশ্বাসী।
শামীম ওসমান বলেন, নারায়ণগঞ্জেকে কেন জানি নেগেটিভভাবে প্রেজেন্ট করা হয়। কারা নারায়নগঞ্জকে নেগেটিভভাবে এক্সপোজ করে? কারা দেখায়, কেন দেখায়? এইটা আমার সাংবাদিক ভাইদের প্রতি প্রশ্ন। নারারয়ণগঞ্জ বাংলাদেশকে সার্ভ করে, নারায়ণগঞ্জ সারা বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ২৫ ভাগ একা কাভার করে। আমরা একলা রাজস্ব দেই, এই কথাটা আমাদের বলতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, এই নারায়ণগঞ্জে যে উন্নয়ন কাজগুলো হচ্ছে বা হবে তা একা আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ভোগ করবে না, ভোগ করবে নারায়ণগঞ্জবাসী।
এ সময় নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ জায়েদুল আলম, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হাই, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সালমা ওসমান লিপি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি চন্দন শীল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোসা. ইসমত আরা, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সহ-সভাপতি কাওসার আহাম্মেদ পলাশ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সহ-সভাপতি শাহ্ নিজাম, নারায়ণগঞ্জ বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।