ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে শারীরিকভাবে অসুস্থ এক নারীর জমি জোর করে লিখে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে আপন ভাই রইস উদ্দিনের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) হরিণাকুন্ডু সাব রেজিস্ট্র অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় গাড়ির ওপর শুয়ে অসুস্থ এক নারীর কাছ থেকে দলিলে টিপসই নেওয়া হচ্ছে। এসময় ওই নারী চিৎকার করে উঠে। তার পরই সেখানে লোকজন জড়ো হলে রেজিস্ট্রি না করে চলে যান তারা।
রইচ উদ্দিন হরিণাকুন্ডু উপজেলার জোড়াদহ গ্রামের লুকমান শাহের ছেলে ও মেয়ে জাহানারা খাতুন।
জোড়াদহ ৩নং ওয়ার্ড সদস্য সেলিম আহমেদ জানান, রইস উদ্দিন ঘটনার দিন তার অসুস্থ বোন জাহানারা খাতুনকে পাখিভ্যানে করে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যান। দলিলে টিপসই নেওয়ার সময় তিনি চিৎকার করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় এক সংবাদকর্মী সেটির ভিডিও ধারণ করেণ। তখন দৌড়ে পালিয়ে যান রইস উদ্দিন। ঘটনা জানাজানি হলে ওই পরিবারের লোকজন জানায়, অসুস্থ জাহানারার স্বামী ও ছেলে সবাই ওই জমি বিক্রয় করতে রাজি ছিল। কিন্তু ওই নারী রাজি ছিল না। যার কারণে তিনি জমি লিখে দিতে রাজি হননি। এ কারণেই তিনি রেজিস্ট্রি করতে গেলে চিৎকার করে উঠে।
এদিকে ফেসবুকে ভিডিওটি ভাইরাল হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে। অনেক ফেসবুক ইউজার এ ঘটনাটিকে অমানবিক উল্লেখ করে অভিযুক্ত রইস উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
ফলসী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম মনির জানান, রইস উদ্দিন আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। সে যেটা করেছে সেটি অমানবিক। সভ্য সমাজে সম্পত্তির লোভে একজন মানুষ নিজের বোনের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে এটা সবাইকে মর্মাহত করেছে। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক নওশের আলী জানান, ওই ব্যক্তির বোন তাকে জমি দান করবে, এবং একটি হেবা দলিল (দানপত্র) করবে বলে রেজিস্ট্রি অফিসে এসেছিল। সেই অনুযায়ী দলিলটি লেখা হয়েছিল। তবে দলিলে টিপসই দেওয়ার সময় যখন ওই নারী চিৎকার করে তখন আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে দিই।
অভিযুক্ত রইচ উদ্দিন জোর করে দলিলে টিপসই নেওয়ার কথা অস্বীকার করে জানান, আমার বোন আমার কাছে ৯ শতাংশ জমি বিক্রয় করতে চেয়েছিল। যেটি হেবা দলিল (দানপত্র) করে রেজিস্ট্রি করতে চেয়েছিলাম। সেই কারণে তাকে রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সে মানসিক ভারসাম্যহীন। অফিসে আসার পর তার শরীর বেশি খারাপ হওয়ায় সে চিৎকার করে। পরে রেজিস্ট্রি না করে ফিরে যাই।
ঝিনাইদহ জেলা রেজিস্ট্রার মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি আমি আপনার কাছ থেকেই প্রথম শুনছি। ফেসবুকের ভিডিও দেখার পর তিনি বলেন, এটি চরম অমানবিক। এমন দলিল রেজিস্ট্রির কোনো সুযোগ নেই। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এমনভাবে জোর করে কারও কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি করার কোনো সুযোগ নেই।