ইউপি নির্বাচন : ভোটকেন্দ্র দখল করে ছাত্রলীগের জাল ভোট

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০১৯, ৬:১৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৬ বছর আগে
  • Print

বড়লেখা প্রতিনিধি:

ভোট কেন্দ্র দখল করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে জোরপূর্বক ব্যালট কেড়ে নিয়ে জাল ভোট দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (১৮ মার্চ ) দুপুরে বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির নান্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হলেও পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এমনকি তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করেছেন একাধিক সাংবাদিক। পুলিশের সামনেই স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। কেড়ে নেয়া হয় সাংবাদিকের একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা। ছাত্রলীগের তাণ্ডবে ভোট কেন্দ্রে আসা ভোটাররা আতঙ্কে দিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।

হামলায় দুই সাংবাদিকসহ ৩ জন আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

হামলায় আহতরা হলেন- লাতু এক্সপ্রেস’এর সম্পাদক দেলোয়ার হোসাইন, একাত্তর টিভির উপজেলা প্রতিনিধি এ.জে লাভলু এবং সাংবাদিক দেলেয়ারের ছোট ভাই মোক্তার হোসাইন।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির নান্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। বেলা ১২টা্র দিকে ওই কেন্দ্রে প্রবেশ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ জুবায়ের লিটন ও রফিক উদ্দিন আহমদের অনুগত ছাত্রলীগ ক্যাডার জাকের, জাফর, জাহিদ ও সাব্বিরসহ আরো কয়েকজন। এসময় তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী সোয়েব আহমদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে। পরে তারা কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকায় শীল মেরে ব্যালট বক্সে ঢুকাতে থাকেন। জাল ভোটের খবর পেয়ে সাংবাদিক দেলোয়ার হোসাইন এবং একাত্তর টিভির উপজেলা প্রতিনিধি এ.জে লাভলু কেন্দ্রে ঢুকতে চাইলে দায়িত্বরত শাহবাজপুর তদন্তকেন্দ্রের সহকারী পুলিশ পরিদর্শক এসআই রতন কুমার হালদার তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেন। এসময় তিনি তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতারা যোগ দেন। তারা সাংবাদিকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকালে দেলোয়ার হোসাইনের ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ছাত্রলীগের তাণ্ডবে ভোট কেন্দ্রে আসা ভোটাররা আতঙ্কে দিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। ঘটনার সময় দেলোয়ারকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তার ছোটভাই মোক্তার হোসাইনও আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে বড়লেখা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোপাল দত্ত দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে তিনি আহত সাংবাদিকদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

উত্তর শাহবাজপুর ইউপির নান্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, কতিপয় সন্ত্রাসী কেন্দ্র দখল করে আমার কাছ থেকে শতাধিক ব্যালট কেড়ে নিয়ে জাল ভোট দিয়েছে। সাংবাদিকদের কেন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রের বাইরে পুলিশের সাথে সাংবাদিকদের কি ঝামেলা হয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সোয়েব আহমদ বলেন, নৌকার প্রার্থী রফিকুল ইসলামের সুন্দরের পক্ষে ছাত্রলীগের কর্মীরা কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দিয়েছে। এসময় পুলিশ নীরব দাঁড়িয়ে দেখেছে। তাদের বাধা দেয়নি। এসময় তারা সাংবাদিকদের মারধর করেছে।

দায়িত্বরত পুলিশের এসআই রতন কুমার হালদার বলেন, ভোটারদের সারি দীর্ঘ থাকায় সাময়িক সময়ের জন্য সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে পুলিশের তরফ থেকে বলা হলে তারা তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রলীগ কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট প্রদান করেছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জাল ভোট তো দূরের কথা কেন্দ্রে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাই ঘটেনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও নিউজ