দুই দফা অবরোধ প্রত্যাহারের পর আবারো বেঁকে বসেছেন চা শ্রমিকরা। কাজে ফেরার শর্ত হিসেবে এবার তারা প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথা শুনতে চান।
হোক ভার্চ্যুয়ালি কিংবা মিডিয়ার মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী বললেই তারা কাজে ফিরবেন।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের লাক্কাতুড়া চা বাগানের গলফ মাঠে পঞ্চায়েত কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রীর কথা না শুনে তারা কাজে যোগ দেবেন না। তাতে প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমেও যদি তাদের আশ্বস্ত করেন, তবুও হবে।
বৈঠক শেষে এমন তথ্য নিশ্চিত করে চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন, ৩০০ টাকা মজুরি ছাড়া শ্রমিকরা কাজে যেতে চাচ্ছেন না। গতকাল যারা কাজে যোগ দিয়েছিলেন, আজ তারাও কর্মবিরতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সিলেটের ২৩ বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয়, প্রধানমন্ত্রী যদি ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন কিংবা মিডিয়ার মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে অন্তত একবার তাদের আশ্বস্ত করেন, তাহলেই তারা কাজে ফিরে যাবেন।
এর আগে মঙ্গলার সকালে লাক্কাতুড়া, মালনীছড়া ও তারাপুর বাগানের শ্রমিকরা ৩শ’ টাকা মজুরির দাবি নিয়ে মিছিল করে লাক্কাতুড়া বাগান সংলগ্ন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তায় জড়ো হন। তারা রাস্তার পাশে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসে মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানান। সিলেটের অন্যান্য বাগানের শ্রমিকরাও কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকেন।
এদিকে, মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার স্কুল চৌমহনী রেললাইন অবরোধ করেন চা শ্রমিকরা। ওই সময় চট্রগ্রাম থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শ্রমিকদের বুঝিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে।
মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে দুই দিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন চা শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের এ দাবিতে মালিক পক্ষ সায় না দেওয়ায় ১৩ আগস্ট থেকে তারা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যান। এরপর দেশের ১৬৮টি বাগানে (ফাঁড়ি চা বাগানসহ ২৩২টি) ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন। চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক কাজ বন্ধ রেখে নেমে পড়েন মহাসড়কে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাগানে বাগানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
তাদের আন্দোলন থেকে ফেরাতে দফায় দফায় বৈঠক চলে। গত শনিবার শ্রম অধিদপ্তরের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৪৫ টাকা মজুরি মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু তাতে বেঁকে বসেন শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ওইদিন বিকেলে তারা ফের আন্দোলন শুরু করেন। পরে রাতে সিলেট জেলা প্রশাসনে বৈঠক হলেও শ্রমিকদের বিভক্তির কারণে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকে।
রোববার (২২ আগস্ট) দুপুরে চা শ্রমিকরা সিলেট এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্বাসে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। পরে রোববার দিনগত রাতে সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু ওই বৈঠক থেকেও কোনো ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত আসেনি। বরং শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে অটল থাকেন।
সর্বশেষ রোববার রাতে মৌলভীবাজারে প্রশাসনের সাথে বৈঠক শেষে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা জানান চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সোমবার সকালের ভেতরই সব বাগানে পৌঁছে যায়।
ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত ১২০ টাকা মজুরিতেই কাজে ফিরবেন শ্রমিকরা। তবে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে নিজেদের দাবি জানাবেন। কিন্তু সোমবার সকালে চা শ্রমিকদের একটি পক্ষ ফের বেঁকে বসে। তারা কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। আরেকপক্ষ বেলা ১টার দিকে কাজে যোগ দেয়। মঙ্গলবার ফের তারাও কাজে না গিয়ে কর্মবিরতিতে যোগ দেন।