শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের সংঘর্ষ, পাওয়া গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩, ২:০৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১১ মাস আগে
  • Print

শাবিপ্রবি (সিলেট): ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের (এক নেতার অনুসারী) সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তবে ঘটনার পর চাঁদাবাজি, ছাত্রীদের উত্যক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের (একাংশ) সঙ্গে মতবিরোধসহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী ও কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও আলোচনা-সমালোচনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুল ফটকের সামনে যুবলীগের একটি কার্যালয় আছে। এর নেতৃতে রয়েছেন সিলেট মহানগর বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের সহ-সভাপতি মো. দুলাল মিয়া। প্রভাব খাটিয়ে তার অনুসারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে অবস্থিত স্থায়ী-অস্থায়ী বিভিন্ন দোকানপাট থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলেন। পাশাপাশি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করা তার অনুসারীরা ছাত্রীদের ইভটিজিং, বুলিং, উত্যক্ত করা ও অশালীন মন্তব্য করায় লিপ্ত। অন্যদিকে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে মারধর, উচ্চস্বরে গানবাজনা, বাকবিতণ্ডা, দখলদারিত্বসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে দুলাল মিয়া ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে মাদকদ্রব্য সাপ্লাই, ক্যাম্পাসে আড্ডা ও বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে দুলালের অনুসারীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠে। তাতেই ক্যাম্পাস ও হলে প্রবেশ করে দুলালের অনুসারীরা। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে দুয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে দুলালের আঁতাত রয়েছে বলেও জানা যায়। শুক্রবার (১৬ জুন) দুলারের অনুসারী কয়েকজন বখাটে মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চায়। কিন্তু তাদের বাধা দেয় নিরাপত্তাপ্রহরীরা। তখন বহিরাগতরা গার্ডের গায়ে হাত তুললে তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

এসব অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেন মো. দুলাল মিয়া। বলেন, আমি কোনো দোকান থেকে চাঁদা নিই না। তারা আমার বিদ্যুৎ চালায়, সেজন্য টাকা দেয়। আমার লোকজন কাউকে উত্যক্ত বা এ ধরণের কোনো কাজ করে না। এমন কিছু প্রমাণিত হলে প্রশাসন যে শাস্তি দেবে আমি মেনে নেব।

ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তেমন কিছুই জানি না। পরে গিয়েছিলাম। তারা (শিক্ষার্থী) অতর্কিত হামলা ও অফিস ভাংচুর করল, আমাকেও মারল, এখন আমি ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি আছি। সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করলে সব তথ্য বের হবে।

শাখা ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বলেন, শুক্রবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যে ন্যাক্কানজনক ঘটনা ঘটেছে সেটার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। তবে দুলালের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো মতবিরোধ নেই।

ঘটনার পর ইফরাতুল হাসান রাহিম নামে এক শিক্ষার্থী সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, স্থানীয় ট্যাগ দিয়ে কেন একটা গোষ্ঠীকে আড়াল করা হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়! এর আগেও এই একই গোষ্ঠী শিক্ষার্থী এবং গার্ডদের উপর হামলা চালিয়েছিল, যার কোনো বিচার হয়নি!

নাফিউল আবরার নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শুক্রবার সংঘর্ষ স্থানীয়দের সাথে না। সবাই যুবলীগ সন্ত্রাসী দুলালকে গ্রেপ্তারের দাবী তুলছেন। কিন্তু পেছনের ইতিহাস হচ্ছে দুলালকে তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের একাংশ। তারা পদ-পদবী পাওয়ার জন্য তাকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করে।

মাহবুব নামে আরেকজন লেখেন, একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে একটি বাজে সিন ক্রিয়েট করছে। আর আমরা এটাকে স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘাত বলে চালিয়ে দিচ্ছি!

এদিকে শুক্রবার রাতে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান শবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এ সময় ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দেন তিনি এছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ ফান্ড থেকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা এখন শঙ্কামুক্ত। ঘটনার বিষয়ে প্রশাসন থেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। যদি তা না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম রুখন বলেন, উভয়পক্ষ নিজেদের মধ্যে বসে সমাধান করবে বলছে। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশে বাঁধা দিলে গার্ডের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায় বহিরাগতরা। এর এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সঙ্গে বহিরাগতদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরে প্রক্টরিয়াল বড়ির সদস্য ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। আহতরা ওসমানি ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে বাসা ও হলে চলে ফিরেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও নিউজ