দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সৌন্দর্যে মোড়া পাহাড়বেষ্টিত সিলেট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলা নিকেতন বলা যায়।। উঁচু-নিচু পাহাড়-টিলা, হাওর, নদী, বনাঞ্চল, ঝরনার অপরূপ সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে উঁকি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু নারী-পুরুষ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ছুটে আসেন।
এ দিকে পর্যটন স্পটগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় নানান ভোগান্তিতে পড়তে হয় পর্যটকদের। তবে এবার পর্যটক ও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ। ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সিলেটের জাফলং থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই সড়কে একসাথে ২৩টি পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে আসতে পারবেন পর্যটকরা। এতে বদলে যাবে সিলেটের পর্যটন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিলেটের জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনার প্রেরিত ২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর হয়ে জাফলং পর্যন্ত একটি সড়ক তৈরির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এরপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল জাফলং-কোম্পানিগঞ্জের সাদাপাথর পর্যন্ত সড়ক তৈরির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়ে পত্র পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগ।
সড়কটি বাস্তবে রূপান্তরিত হলে পর্যটকরা একটি সড়কে যাতায়াত করে ২ দিনে ২৩টি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন। সড়কটি নির্মাণ করা হলে সিলেটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে। সেই সাথে পর্যটন শিল্পে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এই অঞ্চলের মানুষের কর্মস্থানের বিশাল সুযোগ তৈরি হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইতোমধ্যে তারা প্রাথমিক জরিপ কাজ শেষ করেছেন। এই প্রকল্পটির আশপাশে আরো কয়েকটি চলমান প্রকল্প থাকায় এই সড়ক নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর।
জানা যায়, প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার এই তিনদিন সিলেটে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। শুক্রবার ও শনিবার সরকারী বন্ধ থাকায় চাকরিজীবিরা আসা যাওয়া করেন। তাদের অনেকেই একদিনে প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভুমি জাফলং ও পাথর সাম্রাজ্য সাদাপাথর ঘুরে দেখতে চান। কিন্তু সময় ও ভোগান্তির কারণে তা একদিনে ঘুরে বেড়ানো যায় না। কারণ যেখানে মাত্র ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে জাফলং থেকে সাদাপাথর যাওয়া সম্ভব হয়। সেখানে ১২০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয়। আর এই ১২০ কিলোমিটারে পাড়ি দিতে গিয়ে হাতছাড়া হয়ে যায় আরো ৫টি পর্যটন স্পট। জাফলং থেকে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর প্রতিমধ্যে পান্তুমাই, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, শ্রীপুর, শাপলা বিল, লাক্কাতুড়া চা-বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যাবে।
প্রস্তাবটিতে কি আছে : সড়কটি বাস্তবায়ন হলে প্রস্তাবিত ট্যুর প্ল্যান অনুযায়ী সিলেটে থেকে জাফলংয়ের উদ্দেশে প্রথম দিনে পর্যটকরা ডিবির হাওড়, জৈন্তাপুর রাজবাড়ী, নলজুরি ওয়াটার ফলস ভিউপয়েন্ট, শ্রীপুর জিরো পয়েন্ট, রাংপানি নদী, তামাবিল জিরো পয়েন্ট, জাফলং জিরো পয়েন্ট ঘুরতে পারবেন। জাফলংয়ের ডাউকি নদীর ওপর কেবল কারের প্রস্তাবনা রয়েছে। পর্যটকরা চাইলে কেবল কারে নদী পার হতে পারবেন আবার জাফলং ব্রিজ দিয়েও গাড়ি নিয়ে নদী পার হয়ে খাসিয়া পুঞ্জি, চা-বাগান ঘুরে ভারতীয় পাহাড়ের পাশ দিয়ে প্রস্তাবিত সড়ক ধরে মায়াবি ঝরনা, পান্থমাই ঝরনা, বিছনাকান্দি ট্যুরিস্ট স্পট দেখতে পারবেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো প্রস্তাবনায় গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দিতে পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট তৈরি হবে।
প্রস্তাবনায় দ্বিতীয় দিন ভোর থেকে ভ্রমণপিপাসুরা লক্ষণছড়া, উতমাছড়া, সাদাপাথর ট্যুরিস্ট স্পট ঘুরে আবারও সিলেটে ফিরতে পারবেন। ফেরার পথে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, বাইশটিলায় নৌকা ভ্রমণ, মালনিছড়া চা বাগান, লাক্কাতুরা চা বাগান, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরান (রহ.) মাজার, সিলেটের প্রথম মুসলিম গাজী বুরহান উদ্দিন (রহ.) মাজার দর্শন ও জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শেষ করতে পারবেন দ্বিতীয় দিনের ভ্রমণ।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, পর্যটকরা ইচ্ছা করলে উলটোদিক থেকেও শুরু করতে পারবেন তাদের ভ্রমণ। সেক্ষেত্রেও গোয়াইনঘাট অংশে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না থাকায় জাফলং থেকে সাদাপাথর বা সাদাপাথর থেকে জাফলং যেতে হলে ভিন্ন সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এতে করে সময় খরচ দুটিই বাড়ে। জাফলং থেকে সাদাপাথর পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সড়কটি বাস্তবায়িত হলে এক সড়ক দিয়েই অনেকগুলো স্পট ঘুরে দেখতে পারবেন পর্যটক দর্শনার্থীরা।