দিনাজপুর জেলা প্রশাসক বলেন, দিনাজপুরে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে ৯ শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে
গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে দিনাজপুরে পুনর্ভবা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিতে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু স্থানে বা বাঁধের ওপর। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত জেলা প্রশাসন ৯০০ পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছে।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন এক প্রতিবেদনে জানায়, এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন সদরের খামার ঝাড়বাড়ী, হীরাহার, বালুয়াডাঙ্গা, মাঝাডাঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকার হাজারেরও বেশি মানুষ। পানিতে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় পুনর্ভবা নদীর তীরের বাঁধে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান নিয়েছে অনেক পরিবার। এছাড়া বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই।
সোমবার সন্ধ্যায় পুনর্ভবা নদীর তীরে লালবাগ এলাকায় গেলে বাঁধের ওপর অশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিরা জানান, বাড়িতে এক বুক বা তারও ওপর পানি। ফলে বাড়িতে আর থাকা যাচ্ছে না। পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। ফলে তারা বাধ্য হয়েই এখানে আশ্রয় নিয়েছেন। বাড়ি থেকে কোনো কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি।
ওই এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, “নদীর তীরে বাড়ি। একটুতেই পানি প্রবেশ করে। গত কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে বাড়িতে পানি উঠতে শুরু করে। রবিবার রাত থেকে পানি যেভাবে বাড়তে শুরু করে, এ কারণে সোমবার সকালেই আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে।”
এক নারী বলেন, “বাড়ি থেকে কোনো কিছুই নিয়ে আসতে পারিনি। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন বাঁধের ওপর রাত কাটাতে হবে। আমাদের খাওয়ার মতোও কিছু নাই। যদি সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে বেশ উপকার হয়। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আমাদের খোঁজ রাখে না।”
মাঝাডাঙ্গা এলাকার সেলিম রেজা বলেন, “গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে পানি হয়েছে এ জন্য এক প্রকার বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ৩ দিন দিন ধরে বেশ কয়েকটি পরিবার পানিবন্দি। এখন বৃষ্টি নাই, তারপরও পানি বাড়ছে।”
সদর উপজেলার ৬ নম্বর আউলিয়াপুর ইউনিয়নের নতুনপাড়া ও খামার কাচাই এলাকার চিত্রও প্রায় একই। ওই এলাকার তিন শতাধিক পরিবারের মানুষজন পানিবন্দি। বাড়ি থেকে বের হতে হলে বুক পানি মারিয়ে আসতে হয়।
দুপুরে পানিবন্দি চার শতাধিক পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ।
জেলা প্রশাসক বলেন, “দিনাজপুরে পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে ৯ শতাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। যেসব মানুষ রান্না করে খাওয়ার মতো অবস্থায় নাই, তাদের খিচুড়ি রান্না করে দেওয়া হচ্ছে।”
পানির নিচে দেড় হাজার হেক্টর জমির ধান
একইসঙ্গে পানির নিচে তলিয়ে গেছে দেড় হাজার হেক্টর জমির ধান। এসব ধান নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে যেসব ধান পেকে গেছে, আর কয়েকদিন পরেই উঠতো কৃষকের গোলায়। সেসব ধান গজিয়ে বা পচে গিয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
মাঝাডাঙ্গা এলাকার কৃষক ফিরোজুল ইসলাম বলেন, প্রায় দেড় বিঘা জমির ধান পেকে গিয়েছে। এসব ধান আর এক সপ্তাহের মধ্যেই ঘরে উঠতো। এখন এসব ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে করে এসব ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি। যদি এটি হয় তাহলে আমাদের অনেক লোকসান পোহাতে হবে।
গোসাইপুর এলাকার একরাম হোসেন বলেন, আমাদের জমির ধান ডুবে গেছে। এক বিঘা জমির বেগুন ও মরিচ গাছ ডুবে গেছে। আলুর ক্ষেত তৈরি করেছিলাম সেটি ডুবে গেছে। এটা আমাদের জন্য বড় একটি ক্ষতি। ধান, বেগুন ও মরিচ ক্ষেতে অনেক লোকসান হবে।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুজ্জামান বলেন, “প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমির ধান ডুবে গেছে। তবে নতুন করে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমরা আশা করছি দ্রুত পানি নেমে যাবে। আর পানি নেমে গেলে যেসব ধান পেকেছে সেসব ধান দ্রুত কাটা ও মাড়াই করে শুকাতে দিতে হবে। তাহলে তেমন ক্ষতি হবে না। পানি নেমে গেলে সবজি ক্ষেতও কিছুটা রক্ষা পাবে।”