‘নিজের অজান্তে’ হারিয়ে যাওয়ার কথা জিডিতে লিখলো পুলিশ

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:২২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১ বছর আগে
  • Print

প্রশাসনের লোক পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ

রাজধানীর বনানীতে ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তার নাম কামরুল হাসান সাব্বির। তিনি বনানীর ‘টাইগার আইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে সাইবার সিকিউরিটি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। গত রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে সাদা পোশাকে কয়েক ব্যক্তি তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

তবে এই ঘটনায় থানায় দেওয়া অভিযোগে ভুক্তভোগী ‘নিজের অজান্তে’ হারিয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করেছে বনানী থানার পুলিশ। ভুক্তভোগীর স্ত্রী রহিমা আক্তার জানান, তারা থানায় গিয়ে সাব্বিরকে ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ জিডিতে ‘অজান্তে হারিয়ে যাওয়ার’ কথা উল্লেখ করেছে। তা না হলে জিডি করা যাবে না বলে জানিয়েছে।

দেশে বিগত দুই দশক ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে তুলে নেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। তুলে নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর অনেককেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট গ্রেফতার দেখিয়েছে। কেউ কেউ দীর্ঘদিন পর ফেরত এলেও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, এখনও ১৫৩ জন গুমের শিকার হয়ে আছেন। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে ৬২৩ জন ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৮৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৩৮৩ জনকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বা ফিরে এসেছেন। তিন জনের বিষয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

মানবাধিকারকর্মীরা জানান, প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়েই এসব ব্যক্তিকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। প্রায় প্রতিটি ঘটনাতেই ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা থানায় গিয়ে ‘প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’ পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ করলেও ‘হারিয়ে যাওয়ার’ কথা উল্লেখ করে জিডি নিয়েছে পুলিশ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জিডিও নথিভুক্ত করা হয়নি।

বনানী থেকে ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে তুলে নেওয়া কামরুল হাসান সাব্বিরের স্ত্রী রহিমা আক্তার জানান, তার স্বামী অফিস থেকে নিচে নামার পর একদল লোক জোর করে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় তার স্বামীর সঙ্গে একজন সহকর্মী ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অজ্ঞাত ওই ব্যক্তিরা নিজেদের ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয় দিয়ে তার স্বামীকে রাতে বাসায় ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও জানিয়ে যায়।

রহিমা আক্তার জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে তার স্বামীর মোবাইল ফোন বন্ধ পান। পরে তারা থানা পুলিশসহ ডিবি ও র‌্যাব কার্যালয়ে সন্ধান করেও সাব্বিরকে না পেয়ে বনানী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান। থানায় দায়িত্বরত পুলিশ ঘটনার বিস্তারিত শুনে একটি জিডি নথিভুক্ত করলেও সেখানে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ‘নিজের অজান্তে’ই সাব্বির হারিয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

সাব্বিরের স্বজনরা জানান, বনানী থানার পুলিশ তাদের জানিয়েছে, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে খিলক্ষেত এলাকায় সাব্বিরের অবস্থান ছিল বলে জানতে পেরেছেন। প্রশাসনের পরিচয় দেওয়া অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাকে কোথায় নিয়ে গেছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

বনানী থানার উপ-পরিদর্শক এস এম শামছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নিখোঁজ সাব্বিরের পরিবারের সদস্যরা ‘প্রশাসনের লোক’ পরিচয়ে তাকে তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। ঢাকা মেট্রো চ-৫৩-৬৪৩৫ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের একটি হাইএস মাইক্রোবাসে সাব্বিরকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। আমরা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

তুলে নেওয়ার সময় নিখোঁজ সাব্বিরের সঙ্গে অফিসের নিচে অবস্থান করছিলেন তার এক সহকর্মী। নাম প্রকাশ না করে প্রথমে তিনি জানান, ওই ব্যক্তিরা সাব্বিরকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে গেছে। পরে অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়ে তিনি আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও নিউজ