নিত্যপণ্যের মধ্যে নাগালের মধ্যে থাকা ডিমও কয়েক মাস ধরে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে ডিম খেতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। তাই দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রায় মাসখানেক আগে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু হয় একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দফায়১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত একটা ডিমও দেশে ঢুকেনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এলসি খোলা নিয়ে জটিলতার কারণে বিলম্ব হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
এই সুযোগে ডিমের ‘সিন্ডিকেট’ আবারও দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে এই নিত্যপণ্যটি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে হাঁকডাক করে আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও এতদিনে কেন আসছে না ডিম। আবার কবে ডিম আসবে তাও সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। এই সুযোগে বেঁধে দেওয়া দাম থেকে বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে ডিম। তবে ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ডিম আসতে শুরু করবে।
নিয়ম অনুযায়ী, আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরও আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে আমদানির অনুমতিপত্র বা আইপি নিতে হয়। ওই আইপির বিপরীতে আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলে ব্যাংকগুলো। এতদিন আইপি জটিলতায় অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারছিল না।
জানা গেছে, গত সপ্তাহের শেষে ১০ প্রতিষ্ঠানকে আইপি দিয়েছে আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। তাই প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানির ঋণপত্র খুলতে শুরু করেছে। আমদানির অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই ভারত থেকে ডিম আমদানি হবে। তবে বাজারে আসতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে।
বেশ কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে অস্থিরতা। যার মধ্যে ডিমের দাম নিয়ে কারসাজির ঘটনাও আছে। ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশন জেল-জরিমানা করেও দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দাম কারসাজির প্রমাণ পাওয়াতে বিপুল অংকের জরিমানা করা হয়েছে দুটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে৷ তবু কোনো প্রভাব নেই ডিমের বাজারে।
সম্প্রতি সিন্ডিকেটের অতি মুনাফার লোভে প্রতি পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ ১৫-১৬ টাকায় নিয়ে ঠেকায়। যা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সরকারকে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনো বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো চারটি প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়। দ্বিতীয় দফায় ২১ সেপ্টেম্বর ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে ছয় কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। তৃতীয় দফায় গত রোববার নতুন করে আরও পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে তিন দফায় ১৫ প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সেই ডিম এখনো দেশের বাজারে আসেনি।
প্রথম দফায় অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান টাইগার ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী সাইফুর রহমান বলেছেন, এলসি খোলা নিয়ে একটু ঝামেলা ছিল। যে কারণে এলসি খোলার প্রক্রিয়া শেষ করতে দেরি হয়েছে। এখন ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ডিম পাঠানোর ওপর নির্ভর করছে কখন তা দেশে আসবে।
তবে চলতি সপ্তাহে না হলেও আগামী সপ্তাহে ভারতীয় ডিম দেশে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন এই ব্যবসায়ী।
তথ্যমতে, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে ১৫ কোটি ডিম দিয়ে চার দিনের মতো চলতে পারে। তবে এই ডিমে চাহিদা খুব পূরণ না হলেও দামে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে এমন আশা করা হচ্ছে।