জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১:০৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১ বছর আগে
  • Print

শনিবার (০৭ অক্টোবর) হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর থেকেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সব ধরনের সেবা বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। সব দিক থেকে অবরোধ করে গাজায় ষষ্ঠ দিনের মতো মুহুর্মুহু বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৩শ ছাড়িয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ।

হামাসের হামলার সময় শতাধিক ইসরায়েলি সেনা ও বেসামরিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জিম্মিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক রয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী শহরগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার পর নিহতের সংখ্যা প্রকাশ হতে শুরু করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ করা হবে না বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী।

সামাজিক মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে জ্বালানিমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেছেন, হামাসের হাতে বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত কোনো বৈদ্যুতিক সুইচ চালু হবে না, পানির লাইন বন্ধ থাকবে এবং কোনো জ্বালানিবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করবে না।
গাজার একমাত্র পাওয়ার স্টেশনটির জ্বালানি বুধবার শেষ হয়ে গেছে। এই অঞ্চলটি এখন জেনারেটরের ওপর নির্ভর করছে।
বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০ জনে। ছয় হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। জ্বালানির অভাবে একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি না থাকায় হাসপাতালের জরুরি জেনারেটরও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ভয়াবহ পানি সংকটের মুখোমুখি হয়েছে গাজার অন্তত সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। গাজায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের কারণে গত শনিবার থেকে ১ হাজার ঘর-বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এ অঞ্চলে অনেকেই পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সেবা সরবরাহে মারাত্মক সংকটের সম্মুখীন।

জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় আরও বলছে, হামলার ঘটনায় আরও ৫৬০টি আবাসন ইউনিট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত; এগুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি বিমান হামলার কারণে কমপক্ষে ১২ হাজার ৬০০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অঞ্চলের ১৩টি হাসপাতাল আংশিকভাবে চালু রয়েছে।

সংস্থাটি আরও বলছে, জ্বালানি ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সরবরাহের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। উপত্যকায় অবরোধ কঠোর করায় পানি সরবরাহ প্রায় বন্ধ। ২৩ লাখ জনগণের গাজায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ তীব্র পানির সংকটে পড়েছে। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ভ্রূণ-বর্জ্য পড়ে আছে। এটি গাজার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিশাল বিপদ।

এক বিবৃতিতে ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের আঞ্চলিক পরিচালক ফ্যাব্রিজিও কার্বোনি বলেছেন, হাসপাতালগুলোর ডিজেলচালিত জেনারেটর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। সহিংসতা বৃদ্ধির ফলে ফলে সৃষ্ট মানবিক দুর্দশা পীড়াদায়ক। আমি বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাছে অনুরোধ করছি।

রেড ক্রসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, গাজা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে হাসপাতালেও বিদ্যুৎ নেই। এতে ইনকিউবেটরে জন্ম নেওয়া নবজাতক ও অক্সিজেনে থাকা বয়স্ক রোগীরা ঝুঁকিতে পড়ছেন। তাছাড়া কিডনি ডায়ালাইসিস ও এক্সরে নেওয়া যায় না। বিদ্যুৎ না থাকলে হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল পৌঁছেছেন। আঞ্চলিক দেশগুলোকে সংঘাতের এই পরিস্থিতির ‌‌‌‘সুবিধা না নিতে’ সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী গাজার সীমান্তের বড় অংশই ইসরায়েলের সঙ্গে, বাকিটা মিশরের সঙ্গে। এর দৈর্ঘ্য ৪১ কিলোমিটার এবং প্রশস্ত ১০ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করছে গাজায়। সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও নিউজ