২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলজিইডির দেড় শতাধিক সড়ক। বন্যার দেড়বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সংস্কার হয়নি সড়কগুলো।
২০২২ সালের বন্যায় ৯৫ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলজিইডির অধীন বিশ্বনাথের কাদিপুর-লামারচক-বৈরাগীবাজার এবং নকিখালী-সিংগেরকাছ সড়কসহ প্রায় ১২৫টি সড়ক। ৯০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেটের অধীন রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী ১৫ কিলোমিটার সড়ক।
বন্যা-পরবর্তী সময়ে সব মিলিয়ে ১০৫টি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, বিশ্বনাথের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা। সড়কগুলো সংস্কারের জন্য তালিকা তৈরি করে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা বাজেট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। দেড় বছরেও ক্ষতিগ্রস্ত এসব সড়ক সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যা-পরবর্তী সময় থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে চলছে হাজার হাজার যানবাহন। খানাখন্দ আর ছোট-বড় গর্তে ভরা অধিকাংশ সড়কে পায়ে চলার উপায়ও নেই। ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন সওজের রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়ক দিয়ে কাদিপুরের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াত করছেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও রোগীরা। এতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ভোগ লাঘবে পৌরসভার পক্ষ থেকে বিশ্বনাথ-লামাকাজী সড়কের দশদল পর্যন্ত ইটের খোয়া ফেলা হলেও বেহাল ওই সড়কে মানুষের দুর্ভোগ কমেনি।
২০২৩ সালের ১৩ জুন রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়ক মেরামতের জন্য কার্যাদেশ পায় আবিদ-মনসুর কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে, নামমাত্র ইটের খোয়া ফেলে বরাদ্দের ২১ লাখ ২৮ হাজার ৩৯৬ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন সংশ্লিষ্টরা। সংস্কার নিয়ে বিতর্ক আর অভিযোগ থাকলেও সম্প্রতি আবারও প্রায় ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে নাজুক অবস্থায় রয়েছে নকিখালী-সিংগেরকাছ আরএইচডি সড়কের পৌনে ১০ কিলোমিটার, রামপাশা-বৈরাগীবাজার আরএইচডি সড়কের ২ কিলোমিটার, বিশ্বনাথ-টেংরা-লালাবাজার আরএইচডি সড়কের সাড়ে ৪ কিলোমিটার, বিশ্বনাথ-নতুনবাজার-কুরুয়া আরএইচডি সড়কের সোয়া ৬ কিলোমিটার, বিশ্বনাথ কলেজ-নাজিরবাজার আরএইচডি সড়কের পৌনে ৪ কিলোমিটারসহ অধিকাংশ সড়ক। ভয়াবহ অবস্থা কাদিপুর-লামারচক-বৈরাগীবাজার সড়কেরও। বন্যার সময় লামারচকের ইশকার আলীর বাড়ির সামনের মোড়ের কালভার্টসহ প্রায় ৩০০ মিটার পাকা সড়ক বানের পানিতে ভেঙে গিয়ে খালে পরিণত হয়। এর মাঝে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হলেও ২০২৩ সালের মে মাস থেকে প্রায় ছয় মাস ধরে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বাসচালক আমিনুল জানান, প্রতিদিন চারবার বিশ্বনাথ-বৈরাগী-সিংগেরকাছ সড়ক দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করেন। এতে বিভিন্ন সময় ব্রেক ফেল হয় এবং গাড়ির ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিকল হয়। বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, দীর্ঘদিন সংস্কারকাজ না হওয়ায় সড়কজুড়ে গর্ত আর খানাখন্দ। জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে পৌরসভার পক্ষ থেকে বিশ্বনাথ পৌর শহর থেকে কাদিপুর পর্যন্ত ইট ফেলে গর্ত ভরাট করা হয়েছে। সওজ কর্তৃপক্ষ কবে কোথায় সড়ক মেরামত করল, তা চোখে পড়েনি তাঁর। সংস্কারের নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও তুলেছেন মেয়র।
বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, বন্যার পর এলজিইডির অধীন প্রায় ১০৫টি সড়ক চিহ্নিত করে দ্রুত সংস্কারের জন্য ৩৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা বাজেটসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এরপর যাচাই-বাছাই করা হলেও পরবর্তী সময়ে অগ্রগতির কোনো সংবাদ পাননি।
এদিকে সড়কের কাজের নামে টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে জানতে আবিদ-মনসুর কনস্ট্রাকশনের কর্ণধার আবিদ মনসুরকে একাধিকবার কল করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ইটের খোয়া ফেলার বিষয়টি ভিন্ন একটি ইস্যু। বর্তমানে ৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রশিদপুর-বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। ত্রিপুরা কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সড়কের কাজও করা হবে।