সিলেটে করোনা মহামারির এক বছর

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২১, ৪:৩৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে
  • Print

 সিলেট জেলায করোনাভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো আজ (০৫ এপ্রিল)। গত বছরের এ দিন প্রথম করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছিলেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। এরপর ১৫ এপ্রিল মৃত্যু হয় তার।

যদিও বাংলাদেশে এর আরও একমাস আগে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। গত বছরের ৮ মার্চ একদিনে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে দুজন বিদেশফেরত, অন্যজন দেশে থাকা তাদের পরিবারের এক সদস্য। এরপর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর সংবাদ আসে।

তখন থেকেই অজানা এ রোগ নিয়ে সারাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী এ রোগের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতি ও কার্যকর ওষুধ সম্পর্কে তখনও অস্পষ্টতা থাকায় শুরুর দিকে করোনা রোগীর চিকিৎসায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রথম দিকে মানুষের ছিল উৎকন্ঠা, উদ্বেগ, ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য না থাকা, গুজব, কোন ওষুধ বা টিকা না থাকা সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা।

অনান্য দেশের মত জাতিসংঘের নির্দেশে মানুষের শুধু করনীয় ছিল বার বার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। বাংলাদেশ সরকার প্রথম দিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় মার্চ মাসের ১৭ তারিখে। সিলেটেও সাধারণ ছুটি চলছিল তখন।

০৫ এপ্রিল বিকেলে খবর আসে প্রথম শনাক্ত রোগীর। ওইদিন রাতেই নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকাস্থ তাঁর বাসা লকডাউন করে দেয় প্রশাসন। পরদিন পুরো হাউজিং এস্টেট এলাকা লকডাউন করা হয়। এরপর তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গরীবের ডাক্তার খ্যাত এ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়।

এ থেকে শুরু। এরপর গত এক বছরে এ জেলায় করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯২ জন। এর মধ্যে সিলেট সিটির সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা এম এ হক, সিলেট-০৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীসহ সিলেটের বেশ ক’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিও আছেন।

সিলেটে করোনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। আর আজ থেকে ফের শুরু হয়েছে লকডাউন। তবে লকডাউন মানছেন না সাধারণ জনগণ। তারা স্বাস্থ্যবিধি নিয়েও উদাসিন। উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি, এতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সোমবার (৪ এপ্রিল) সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৯৬ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৪৩ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৬০৮ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ৬৯ জন ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৭৬ জন রয়েছেন।

সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ২৯২ জন করোনাভারাইরাসে আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ২২৫ জন, সুনামগঞ্জে ২৬ জন, হবিগঞ্জে ১৭ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২৪ জন রয়েছেন।

বিভাগে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৩০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১০ হাজার ১৭৬ জন, সুনামগঞ্জের ২ হাজার ৫৩৫ জন, হবিগঞ্জের ১ হাজার ৬৯৫ জন এবং মৌলভীবাজার জেলার ১ হাজার ৯২৪ জন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৬৬ জন রোগী সিলেট জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে সিলেট জেলায় ১৬১ জন, হবিগঞ্জের হাসপাতালে ২ জন এবং মৌলভীবাজারের হাসপাতালে ৩ জন  চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও নিউজ