৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ১৮ তলা ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে একদল যুবক ওই চাঁদা দাবি করেছেন। তারা গাছ কা’টার সরঞ্জামও নিয়ে গেছেন বলে অ’ভিযোগ উঠেছে
গত ৩১ আগস্ট থেকে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। প্রকল্প এলাকায় অ’পরিক’ল্পিতভাবে লাগানো গাছগুলো বন বিভাগের মাধ্যমে মাপজোখ করে কা’টা হচ্ছিল। এই অবস্থায় মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দিয়ে যুবকেরা গাছ কা’টার সরঞ্জাম নিয়ে যান। বন বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন গাছ কা’টার সরঞ্জাম আনতে গেলে তাদের কাছে গাছ কা’টার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
বুধবার বেলা দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বিকেলে প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন ভবনের জন্য যেসব গাছ কা’টা পড়বে, সেগুলো অর্ধেক কা’টা অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
জানতে চাইলে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লের উপপরিচালক (প্রশাসন) মাহবুবুল আলম বলেন, বেলা তিনটার দিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি লিখিত পত্র দিয়ে ঘটনাটি জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পরিবেশের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছাত্রলীগ নামধারী একদল যুবক তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়েছে। টাকা না দেওয়ায় গাছ কা’টার সরঞ্জাম, করাত ও শাবল নিয়ে গেছে। এগুলো উ’দ্ধার করে চাঁদা চাওয়া ব্যক্তিদের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা কাজ করতে পারবেন না।
বিষয়টি উদ্বেগজনক উল্লেখ করে উপপরিচালক আরও বলেন, কাজটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার একটি প্রকল্প। নতুন ভবন হলে সেখানে ১০০টি বিশেষায়িত শয্যা হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ এমন কাজের শুরুতে যদি এ রকম বাধা আসে, তাহলে তো জনস্বার্থমূলক কোনো কাজই করা যাবে না।
হাসপাতা’লের পরিচালকের দপ্তর সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের এ কাজ গত ৩১ আগস্ট কার্যাদেশ দেওয়ায় শুরুতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন বিভাগ ও গণপূর্তের মাধ্যমে প্রকল্প কাজ শুরু করা হয়। ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। এটি হবে হাসপাতা’লের সুউচ্চ প্রথম ভবন। হাসপাতা’লের প্রধান ফট’ক লাগোয়া স্থানটি এত দিন গাড়ির পার্কিং হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। পাশাপাশি একাংশে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় বাগানের মতো করে বিভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছিল। এ রকম ৬২টি গাছ প্রকল্প কাজের শুরুতে কা’টার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে বন বিভাগের মাধ্যমে কাজটি শুরু করা হয়। গতকাল সকাল থেকে বন বিভাগ, গণপূর্ত ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি শুরু করে।
জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তর সিলেটের সেকশন অফিসার (এসও) আবদুর রহিম বলেন, ‘হাসপাতা’লের মতো স্প’র্শকাতর জায়গায় বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে কয়েকটি গাছ কা’টা পড়ছে। এই গাছ কা’টা হচ্ছে সব নিয়মনীতি মেনে। বন বিভাগ জ’রিপ করে গাছ কা’টার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর বিনিময়ে এভাবে টাকা চাওয়া দুঃখজনক। কী’ আর বলব, আম’রা দুঃখিত ছাড়া তো কিছু বলতে পারি না।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কারা আমাদের ডেকে নিয়ে টাকা চেয়েছে, গাছ কা’টার সরঞ্জাম ছিনিয়ে নিয়েছে—সবই আম’রা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। সেখানে নিরাপত্তাহীনতার কারণে আম’রা সাইট ছেড়ে চলে এসেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাহলে কাজ করব।’
জানতে চাইলে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুল ইস’লাম বলেন, তিনিও ঘটনাটি শুনেছেন। তবে বিস্তারিত কিছুই জানেন না। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে এ কাজ কেউ করেছে বলে তার ধারণা।