ই-পাসপোর্টধারীদের জন্য স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন সেবা দিতে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইলেকট্রনিক গেট তথা ই-গেট চালু হচ্ছে। এরই মধ্যে ছয়টি ই-গেট মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। কারিগরি অন্যান্য কাজ শেষ করে শিগগিরই এ সেবা কার্যক্রম চালু হবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর সূত্র।
এটি চালু হলে বিমানবন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। ই-পাসপোর্টে থাকা মাইক্রোপ্রসেসর চিপ এবং অ্যান্টেনা স্ক্যান করে ই-গেট পাসপোর্টধারী ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করবে। যাত্রীরা ই-গেটে পাসপোর্ট দেওয়ার পরই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে খুলে যাবে ফটক। তারপর মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হবে বিদেশগামীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। যাত্রী নিজে নিজে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন। এ জন্য কোনো কর্মকর্তার প্রশ্নের মুখেও পড়তে হবে না।
বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন পুলিশের মো. কামরুল হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্লোরা লিমিটেড এরই মধ্যে ই-গেট মেশিন স্থাপন করেছে। বাকি কাজ সম্পন্ন করে তারা আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। তখন এটি চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বহির্গমনের জন্য তিনটি এবং প্রবেশের জন্য তিনটি গেট চালু থাকবে।’
এর আগে গত ৩০ জুন ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সেদিন এ কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশই প্রথম ই-গেট কার্যক্রম চালু করে। বিমানবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন বন্দরে মোট ৫০টি ই-গেট স্থাপন করার প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে ইমিগ্রেশন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ই-পাসপোর্ট কার্যকর করতে প্রকল্পের আওতায় জার্মানি থেকে ৫০টি ই-গেট আনা হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এসব ই-গেট স্থাপন করলেও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে ইমিগ্রেশন বিভাগ।
বর্তমান যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের মতোই ই-পাসপোর্টেও একই ধরনের বই থাকবে। তবে পাসপোর্টের একটি পাতায় পলিমারের তৈরি একটি কার্ড রয়েছে। ওই কার্ডে সংরক্ষিত চিপে পাসপোর্ট বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। তবে, ই-পাসপোর্ট চালু হলেও এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হবে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টের আধুনিকায়ন এবং অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিদেশ ভ্রমণ ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রবর্তন করেছে। ইমিগ্রেশন পয়েন্টে ই-গেট স্থাপনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাত্রীদের ইমিগ্রেশন কার্যক্রম দ্রæততার সঙ্গে শেষ করা। বাংলাদেশি ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা ই-গেট ব্যবহার করতে পারবেন। এ জন্য কিছু ব্যবহার বিধিও প্রণয়ন করা হয়েছে।
যাত্রীর ফ্লাইটের তথ্য, শেষ গন্তব্য স্থান, যাত্রা শুরুর স্থান, ভ্রমণের উদ্দেশ্য ও ভিসার তথ্য অবশ্যই ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডাটাবেজে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে ই-গেট সিস্টেমে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করা হবে।
২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে প্রথমবারের মতো ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন করেন। ই-পাসপোর্ট সেবার অংশ হিসেবে গত বছরই বিমানবন্দরে ই-গেট উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু, করোনা মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায় প্রায় এক বছর। অবশেষে সে অপেক্ষার অবসান ঘটল।
এর আগে ২০১৮ সালে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি) এবং জার্মানি ভেরিডোস জিএমবিএইচ সংস্থা ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সংস্থাটির মাধ্যমেই ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট স্থাপন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।