সকল প্রস্তুতি ও ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য থাকা স্বত্তেও শেষ মুহুর্তে এসে স্থগিত ঘোষণা হলো সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন। আজ সোমবার কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল রোববার বিকেলে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় স্থগিত হয় বহুল প্রতিক্ষিত কাউন্সিল। এ নিয়ে সিলেট বিএনপিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাতাসে উড়ছে নানা গুঞ্জন। তবে দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছিল সাজ সাজ রব। গেল ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে ২১ মার্চ জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। গঠন করা হয় ৪ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই কাউন্সিলে বিভিন্ন পদের সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা গণসংযোগে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শেষ মুহুর্তে সম্মেলন স্থগিতের ঘোষণায় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা।
আদৌ সম্মেলন হবে, না কি কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি ঘোষণা হবে এনিয়ে চিন্তিত দলীয় নেতাকর্মী। ঠিক কি কারণে সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে এ নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলছেন না বিএনপি নেতৃবৃন্দ। তবে নাম বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সোমবার ছিল কাউন্সিল কিন্তু আগের দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। এছাড়া জেলা কাউন্সিলের মাত্র ২দিন আগে বিয়ানীবাজার উপজেলা কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এই ৫ পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। কিন্তু এই কাউন্সিল নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। গঠিত হয় পাল্টাপাল্টি কমিটি। এই কমিটি নিয়ে অভিযোগ গড়ায় কেন্দ্র পর্যন্ত। এছাড়াও কয়েকটি উপজেলা ও পৌর বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ স¤পন্ন হয়নি। কয়েকটিতে আসন্ন কাউন্সিলে সুবিধান নিতে কয়েকজন প্রার্থী বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটিতে নিজের পছন্দের নেতাকর্মীদের বেশী পদে রাখার অভিযোগ তুলেন কেউ কেউ। যদিও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ কেউ করেনি। তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রোববার সকালে তারা চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করেছেন। প্রকাশের প্রস্তুতি চলাকালে কাউন্সিল স্থগিত করায় প্রকাশ করা হয়নি।
জানা গেছে, বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক স¤পাদক এম ইলিয়াস আলী নিখোজের পর থেকে সিলেট বিএনপিতে শক্তিশালী তেমন নেতা গড়ে উঠেনি। গেল কয়েক বছর থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপে দ্বিধাবিভক্ত সিলেট বিএনপিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তার হাত ধরেই সিলেটের বিএনপি ছাড়াও প্রায় সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি ঘোষণা হয়। এতে বিভিন্ন সময় কমিটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কাদা ছুড়াছুড়ি ও বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এরপরও সিলেট বিএনপি অন্যান্য যে কোন সময়ের তুলনায় এক প্লাটফরমে ছিল। কিন্তু বিগত যুবদলের কমিটি নিয়ে সিলেট বিএনপিতে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নতুন বলয়ের সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে আরিফ বলয় শক্তিশালী হতে শুরু করে। সম্প্রতি সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আসন্ন জেলা বিএনপির কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিলে পাল্টে যায় হিসাব নিকাশ। এর আগ পর্যন্ত জেলা বিএনপির সভাপতি পদে বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও সাবেক জেলা সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম এবং যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার খবর শোনা যাচ্ছিল। আরিফুল হক চৌধুরীর জেলা সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ায় মুক্তাদির বলয়ে চিন্তার ভাজ পড়ে। সেই কারণে আসন্ন কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন আরিফ বলয়ের নেতাকর্মীরা।
যদিও এমন আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন মুক্তাদির বলয়ের নেতাকর্মীরা। তারা পাল্টা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন আরিফুল হক চৌধুরী মহানগর বিএনপিতে রাজনীতি করেছেন। সেখানে তার বলয় থাকাটা স্বাভাবিক। হুট করেই জেলা বিএনপিতে কাউন্সিল করে সুবিধা করতে পারবেন না জেনেই নানা অজুহাতে কাউন্সিল স্থগিত করিয়েছেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল পরিচালনায় গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট আব্দুল গাফফার গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা দলীয় নির্দেশনার আলোকেই কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি। ইতোমধ্যে চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে যা রোববার প্রকাশের কথা ছিল। আমরাও ভোটার তালিকা প্রকাশের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু এর আগেই কেন্দ্র থেকে কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। কাউন্সিল আয়োজনের জন্য আমরা কয়েকদিন থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে সকল প্রস্তুতি স¤পন্ন করেছি। ব্যালট পেপার, কাউন্সিলার আইডি কার্ড, স্বেচ্ছাসেবক আইডি সহ যাবতীয় ছাপার কাজ স¤পন্ন করেছি। প্রায় সকল ইউনিটের কমিটির তালিকা প্রস্তুত ছিল। ২/৩ টা ইউনিট তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা জমা দিতে দেরী করেছে। এরপরও রোববারের মধ্যেই সকল ইউনিটের তালিকা প্রস্তুত করেছি।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ স¤পাদক ও আসন্ন কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আলী আহমদ বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় কাউন্সিল স্থগিত হয়েছে। কি কারণে স্থগিত হয়েছে তা কেবল কেন্দ্রই বলতে পারে। আমি একজন প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলের পক্ষে মাঠে ছিলাম আছি এবং থাকবো। ভোটাররা যাকে নেতা বানাবে তিনিই নেতা হবেন। আমার প্রত্যাশা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কাউন্সিলের আয়োজন করা হবে।