দূষণের ভারে নদীর পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠছে এবং জীববৈচিত্র শূন্য হয়ে পড়ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ তিনটি সংগঠন।
সোমবার বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা) ও মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে ‘ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা সংগঠনগুলো এ দাবি জানায়।
সভায় বক্তারা বলেন, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষা এবং খাবার পানি সরবরাহ, নৌ চলাচল, কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশে রয়েছে ছোট বড় ৪০৫টি নদী। যার মধ্যে অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৭টি। ৫৪টি ভারতের এবং ৩টি মিয়ানমারের সাথে সংশ্লিষ্ট। দেশের নদীগুলোর ৪৮টি সীমান্ত নদী, ১৫৭টি বারোমাসি নদী, ২৪৮টি মৌসুমী নদী। মানুষের অত্যাচারে নদীগুলো আজ মৃতপ্রায়। দখল, ভরাট, আর বর্জ্যে নদীগুলো এখন নিস্তব্ধ স্রোতহীন এবং দূষণের ভারে পানি ব্যবহারের অযোগ্য এবং জীববৈচিত্র শূন্য হয়ে পড়ছে।
পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীবন-জীবিকা আজ মারাত্বক হুমকির সম্মুখীন উল্লেখ করে তারা আরো বলেন, দেশের নদীগুলোর প্রায় প্রতিটিরই একই দশা। তিস্তার পানি প্রবাহ ব্যাপকহারে কমে গেছে। পদ্মা, তিস্তা এখন মৃতপ্রায়, যমুনায় পড়েছে চর। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতক্ষ্যা দখল, ভরাট ও দূষণের ভারে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলছে। যে পানির অপর নাম ছিল জীবন। আজ সেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষার পানি বিষ হিসাবে পরিলক্ষিত হয়। যেখানে এখন জলজ ও প্রাণী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে।
নদী রক্ষায় এসময় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশগুলো হলো:
ভূপৃষ্টের পানি ব্যবহারের বিষয়টি নগর পরিকল্পনা ও বসতবাড়ী পরিকল্পনা বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত করতে হবে, প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব পানি ব্যবস্থাপনায় চাষাবাদ পদ্ধতির প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে, বৃষ্টির পানি সোককুপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানির উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থায় আবাসিক-অনাবাসিক এলাকায় সেফটিক ট্যাংক ও সোককুপ স্থাপনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, জলাধার রক্ষায় পানি আইনের কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে, পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষকে আগামী ২ বছরের মধ্যে ভূপৃষ্টের পানি ৯০ শতাংশ ব্যবহারের জন্য বাধ্য করতে হবে।
এছাড়া নাগরিকদের মাঝে পানির গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করা এবং অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, খরা মৌসুমে সেচ ও রাসায়নিক সার নির্ভর ধান চাষের পরিবর্তে প্রকৃতি নির্ভর ধান চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, অপরিশোধিত শিল্প কারখানায় বর্জ্য ও পয়:বর্জ্য, নৌযানের বর্জ্য, কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে, ঢাকার আশেপাশের নদীসহ অন্যান্য সকল নদী ও জলাশয় দখল, ভরাট ও দূষণ রোধকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, নদী দূষণমুক্ত করতে হবে এবং নদীর প্রবাহ ও নাব্যতা যথাযথ রাখার লক্ষ্যে নদীতে পিলারসমৃদ্ধ ব্রীজের পরিবর্তে ঝুলন্ত ব্রীজ বা টানেল নির্মাণ করতে হবে।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও বানিপার সাধারণ সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলনের সভাপতি প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাসচিব মাহবুল হক প্রমুখ।