শব্দদূষণের শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে রাজধানী ঢাকার নাম। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের মুরাদাবাদ এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ। শব্দদূষণের দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি শহরই দক্ষিণ এশিয়ার। সম্প্রতি জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচির সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নিউইয়র্ক, হংকং, বার্সেলোনাসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শহরগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জাতিসংঘের পরিবেশ প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসন স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের তালিকায় বাংলাদেশ থেকে আরও রয়েছে রাজশাহী ও টাঙ্গাইল শহরের নাম। এই তালিকায় ভারতের অন্যান্য শহরের মধ্যে রয়েছে দিল্লি, কলকাতা, আসানসোল ও জয়পুর। আর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য শহরের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের করাচি, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, নেপালের কুপন্দোল ও কাঠমান্ডু।
প্রতিবেদনটিতে শব্দের তীব্রতার মাত্রা দুই পর্যায়ে নির্ধারণ করা হয়েছে—আবাসিক ও ট্রাফিক এলাকা। যানবাহনজনিত ট্রাফিক এলাকায় ঢাকায় শব্দের তীব্রতার মাত্রা ১১৯ ডেসিবল এবং আবাসিক এলাকায় ৫৭ ডেসিবল রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহীতে ট্রাফিক এলাকায় শব্দের তীব্রতার মাত্রা ১০৩ ডেসিবল এবং আবাসিক এলাকায় ৫৫ ডেসিবল রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে টাঙ্গাইলে ট্রাফিক এলাকায় শব্দের তীব্রতার মাত্রা পাওয়া গেছে ৭৫ ডেসিবল। টাঙ্গাইলের আবাসিক এলাকায় তা ৬৯ ডেসিবল।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯৯ সালের নির্দেশনা অনুসারে আবাসিক এলাকায় ঘরের বাইরে মানুষের জন্য শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবল। ট্রাফিক এলাকায় তা ৭০ ডেসিবল। এরপর ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এক নির্দেশনায় দিন ও রাতের শব্দসীমা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, দিনের বেলায় ট্রাফিক বা বাণিজ্যিক এলাকায় মানুষের জন্য শব্দসীমা ৫৩ ডেসিবল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব নির্দেশনাকেই সম্প্রতি অতিক্রম করেছে ঢাকায় পাওয়া শব্দের তীব্রতা।
পরিবেশগত শব্দের উৎস যেমন—রাস্তার যানবাহন, বিমান চলাচল, রেলগাড়ি, শিল্প কলকারখানা ইত্যাদি থেকে উৎসারিত শব্দ মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী শহরগুলোর শব্দদূষণের চিত্র তুলে ধরেছে। তাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে প্রতি ১০ জন গণপরিবহন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৯ জনের ক্ষেত্রেই শব্দের মাত্রা (৭০ ডেসিবেল) নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে। ওই শহরের মানুষ শ্রবণশক্তি হ্রাসের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
অন্যদিকে হংকংয়ে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুজন এমন পরিবেশে বাস করে, যেখানে শব্দের তীব্রতার মাত্রা অনুমোদিত সীমা অতিক্রম করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপের বড় বড় শহরের বাসিন্দারা এমন পরিবেশের মধ্যে থাকে, যেখানে শব্দের মাত্রা তাদের স্বাস্থ্যকে ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।