রাজশাহী নগরীতে কিশোর মো. সনি (১৭) হত্যা মামলায় ছেলে ও সহযোগীসহ মহিলা দলের নেত্রী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দিবাগত রাত ২টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার প্রতাপ গ্রাম থেকে র্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে।
তারা হলেন রাজশাহী নগর মহিলা দলের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক বিথী (৩৫), তার ছেলে মঈন ওরফে আন্নাফ (২০) ও তাদের সহযোগী হাবিবি কুমকুম ওরফে সাবা ঐশী (১৯)। তাদের মধ্য আন্নাফ কিশোর সনি হত্যা মামলার প্রধান আসামি। মামলার ৫ নম্বর আসামি তার মা বিথী। তবে এজাহারনামীয় আসামিদের মধ্যে নাম নেই সাবা ঐশীর।
তবে র্যাব বলছে, সাবা ঐশীও হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। তিনজনই র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।
শুক্রবার (৮ জুলাই) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, আন্নাফের নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাং পরিচালিত হতো। ঘটনার দিন রাতে আন্নাফ, সিফাত, সাবা ঐশী মিলে তাদের বন্ধু হৃদয়কে রামেকে দেখতে যান। রামেকে সনির সঙ্গে তাদের দেখা হয়ে যায়। পূর্বশত্রুতার জেরে আন্নাফ, সিফাত, রাহিম, শাহীসহ আরও কয়েকজন মিলে রামেক থেকে সনিকে তুলে নিয়ে নগরী হেতেমখাঁ সবজিপাড়ায় যান। সেখানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সনিকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন তারা। এতে মারা যায় সনি।
তিনি আরও বলেন, কিশোর সনির মৃত্যুর খবর পেয়ে জড়িতরা বিভিন্ন পথে বাংলাদেশের সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেন। ছেলেকে নিয়ে পালাতে বিথী নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ের খান বাংলা রেস্টেুরেন্টের মালিক মো. খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খোকন একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে দেন। ওই মাইক্রোবাস যোগে মঙ্গলবার (৫ জুলাই) তারা নায়ারণগঞ্জে যান। সেখান থেকে বুধবার (৬ জুলাই) জুলাই গাজীপুরে হয়ে কুড়িগ্রামে চলে যান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুড়িগ্রাম থেকে র্যাব-৫ সদস্যরা ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
তিনজনই র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করার পর তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এর আগে গত বুধবার (৬ জুলাই) রাজধানী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে আলাদা অভিযান চালিয়ে সনি হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি আব্দুর রহিম (১৯) ও ৪ নম্বর মো. শাহীকে (১৯) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এই মামলায় মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাজশাহী নগরী থেকে এজাহারনামীয় আরেক আসামি আনিমকে (১৮) গ্রেপ্তার করে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া ছয়জনই সনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জুলাই রাতে রামেক হাসপাতালের সামনে থেকে তুলে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় কিশোর সনিকে। ওই দিন এসএসসি পরীক্ষার্থী সনির জন্মদিন ছিল। এ ঘটনায় তার বাবা নগরীর দড়িখড়বোনা এলাকার বাসিন্দা ও জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখি আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে।
শুরু থেকেই ঘটনার ছায়া তদন্ত করছিল র্যাব। গ্রেপ্তার ৬ আসামির ৫ জনই র্যাবের জালে আটকা পড়েন। অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন র্যাব-৫ অধিনায়ক।