শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি জাকারিয়া পিন্টুকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-২)। এ মামলায় ২০১৯ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণার পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
১৯৯৪ সালে দিনাজপুরে যাওয়ার সময় পাবনার ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলা ও গুলি চালিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা দায়ের হয় পিন্টুর বিরুদ্ধে। তার নামে মৃত্যুদণ্ডসহ ১৯ মামলা রয়েছে। ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
র্যাব জানায়, শনিবার (২৫ জুন) রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে পিন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি অস্ত্রসহ একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, পিন্টু পাবনা অঞ্চলের প্রভাবশালী চরমপন্থি দলের প্রভাবশালী সদস্য। তার নিজেরও একটি সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল।
রোববার (২৬ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, পিন্টু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে সন্ধ্যা আনুমানিক সোয়া ছয়টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনের বগি লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
ওই ঘটনায় ঈশ্বরদীর জিআরপি থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের নির্দেশে মামলা তদন্তের দায়িত্ব সিআইডিকে দিলে সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল মোট ৫২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এর মধ্যে ৫ জন আসামি মারা গেলে তাদের ওই মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বাকি ৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
পরে দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত।
র্যাবের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন, আটক জাকারিয়া পিন্টুর নেতৃত্বে ঈশ্বরদীতে আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মারামারিসহ বিভিন্ন অরাজকতা চলতো। ১৯৮৮ সালে ও পরবর্তীতে বিভিন্ন অপরাধে সম্পৃক্ততায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। ওই সকল মামলায় গ্রেফতার এড়াতে তিনি এলাকা ত্যাগ করে ২০০৪ সাল থেকে ঢাকার মিরপুরে বসবাস শুরু করেন। তার পরিবার ঢাকায় থাকলেও নিয়মিত ঈশ্বরদীতে যাতায়াত করতেন। তিনি ২০১৫ সালে ঈশ্বরদীতে উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিন্টু জানান, তিনি ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদীতে চম্পা হত্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি ছিলেন। ২০০৯ সালে ঈশ্বরদীতে আজম হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবরণ করেন। পরে ২০১১ সালে অস্ত্রসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে কুষ্টিয়া ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। এই মামলায় তিনি ৩ মাস কারাভোগ করেন। পরে জামিনে মুক্ত হন। ওই মামলায় বিজ্ঞ আদালত তাকে ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।
এছাড়া ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে আধিপত্য বিস্তার, বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা দায়ের হয়। এ পর্যন্ত তার নামে একটি মৃত্যুদণ্ড ও একটি ১৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা পরোয়ানা ছাড়াও বিভিন্ন অপরাধে ৬টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই পিন্টু আত্মগোপনে ছিলেন। রায় ঘোষণার পরের দিনই তিনি দেশ ত্যাগ করে ভারতে আত্মগোপনে যান। সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। পরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ঢাকা, রাজশাহী ও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকেন। সর্বশেষ কক্সবাজারের টেকনাফে তার বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে র্যাব-২ তাকে গ্রেফতার করে।
পিন্টুর রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, যে সময় হামলার ঘটনা ঘটেছিল, তখন পাবনা-কুষ্টিয়া অঞ্চলে ছিল সর্বহারা ও চরমপন্থিদের আধিপত্য। তবে মামলায় ধরণে বলা যায় তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ১৯৮৮ সাল থেকে তার সন্ত্রাসী হামলা কর্মকাণ্ড রয়েছে।
পিন্টু ২০১৫ সালের ঈশ্বরদী অঞ্চলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন। তিনি চরমপন্থি দলের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ ব্যাপারটি স্পষ্ট হবে বলেও উল্লেখ করেন কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।