ছাত্রদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে এবার ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (সিওমেক) সব সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বুধবার (০৩ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিতে গিয়ে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান আন্দোলনকারীদের পক্ষে এ হুমকি দেন।
তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইন্টার্ন কর্মবিরতি চলছিল। এই কর্মবিরতি সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত চলমান থাকবে। কলেজের সব ধরনের পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করেছিলাম, সেটিও চলমান থাকবে। যে রাস্তাটি অবরোধ করেছিলাম, মানুষের সুবিধার্থে সেটি খুলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা জরুরি সেবা চালু রেখেছিলাম, কোনো সমাধান হয়নি। কিন্তু আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টার মধ্যে যদি সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হয়, রাস্তা, আউটডোর এবং হাসপাতাল বন্ধ করে দেবো।
হাসপাতাল পরিচালকের উপস্থিতিতি তিনি বলেন, স্যারকে এটি জানিয়ে দিতে চাই। আগামীকাল সকাল ৮টার মধ্যে সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হলে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ আমরা চলতে দেবো না, রোগীও দেখতে দেবো না।
অবরোধ প্রত্যাহারের আগে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আসামিদের মোবাইল নম্বর, ফেসবুক আইডি, তাদের ঠিকানা সব দেওয়ার পরও কোন ক্ষমতাবলে, কাদের ইন্দনে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা হয়নি? আমরা আগামীকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। আমরা জানি আমরা মানুষ। আমরা মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। তবে আসামিরা গ্রেফতার না হলে আমাদের আন্দোলন চলবে।
এরআগে মিড লেভেল চিকিৎসক পরিষদের নেতারা এসে আন্দোলনে একাত্বতা পোষণ করেন। এসময় মিড লেভেল চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাই চিকিৎসক। এখন আমাদের থাকার কথা ছিল হাসপাতালে রোগীর সেবায়। কিন্তু আমরা কেউ নিরাপদ নই। তাই নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটায় রাস্তায় নেমেছি। অপরাধীদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
অবরোধ প্রত্যাহারকালে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমি আগেও বলেছি, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে সর্বোচ্চ মহল পর্যন্ত কথা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গেও আলাপ করেছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটা রেজাল্ট পাবো। আমাদের সেই ধরনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের এমন কিছু করা যাবে না, যাতে রোগীর বিরুদ্ধে যায়। আমাদের দাবির সঙ্গে মানবিক দিকটাও দেখতে হবে। সবাইকে ধৈর্য্য ধরে স্ব স্ব কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, হাসপাতালের রোগীদের সেবা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেটা পালন করে যাবো। যদিও অনেক সমস্যা থাকার পরও কাজ করে যাচ্ছো।
শান্তির্পূর্ণভাবে সবকিছু করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চিকিৎসক। আমাদের জন্ম মানুষের সেবা করার জন্য। রাস্তা অবরোধ করা মানুষের এমনকি রোগীর জন্য কষ্ট। তিনি সড়ক অবরোধ তুলে নিতে আন্দোলনকারীদের অনুরোধ জানান।
এর আগে দুপুর দেড়টার দিকে হামলাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে আন্দোলনকারীরা রাস্তায় নামেন। তারা হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে যানচলাচল বন্ধ করে দেন। এমনকি রোগী গমনাগমনের প্রবেশপথ (২য় ফটক) সম্মুখে অবস্থান নিয়ে প্রধান সড়ক অবরোধ করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, স্ট্যাম্প ও লাঠি হাতে আন্দোলনকারীরা যানচলাচলের গতিরোধ করেন। তাদের হুমকিতে এবং হাতে লাঠি দেখে পথচারি ও যাত্রীরা ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়েন।
ভোক্তভোগীরা জানান, মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদের আন্দোলনে জরুরি প্রয়োজনে বের হয়ে আটকা পড়েন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স চলতে দেননি। দিকভ্রন্ত রোগীর স্বজনরা হুইল চেয়ারে রোগীকে বসিয়ে প্রধান সড়ক দিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। রোগী আনতে গেলে অ্যাম্বুলেন্সও সড়ক থেকে ফিরিয়ে দেন। অবরোধকালে যানজটে রোগী নিয়ে আটকা পড়েন অনেকে। পরে বিকল্প পথে রোগীদের বহন করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান স্বজনেরা।
এরপর বেলা আড়াইটার দিকে হাসপাতাল পরিচালকের আশ্বাস ও অনুরোধে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (০৪ আগস্ট) পর্যন্ত আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার নেন।
গত সোমবার (০১ আগস্ট) রাতে দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় আন্দোলনে নামেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় দু’টি মামলাও করে হাসপাতাল ও কলেজ প্রশাসন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (২ আগস্ট) মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পুলিশ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসে তাদের দাবিগুলো মেনে নিলেও অপর আসামিদের গ্রেফতার দাবিতে তারা বুধবার (০৩ আগস্ট) ফের অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।